সাহিত্য রস

সবচেয়ে বড় কবিতা, গল্প, ছন্দ এবং গান প্রকাশের ওয়েবসাইট

সঙ্গীহারা

1
0

সবাই নাচে ফূর্তি করে সবাই করে গান,
একলা বসে হাঁড়িচাঁচার মুখটি কেন ম্লান ?
দেখ্‌ছ নাকি আমার সাথে সবাই করে আড়ি-
তাইত আমার মেজাজ খ্যাপা মুখটি এমন হাঁড়ি ।
তাও কি হয় ! ঐ যে মাঠে শালিখ পাখি ডাকে
তার কাছে কৈ যাওনিকো ভাই শুধাওনিতো তাকে !
শালিখ পাখি বেজায় ঠ্যাঁটা চেঁচায় মিছিমিছি,
হল্লা শুনে হাড় জ্বলে যায় কেবল কিচিমিচি ।
মিষ্টি সুরে দোয়েল পাখি জুড়িয়ে দিল প্রাণ
তার কাছে কৈ বস্‌লে নাতো শুনলে না তার গান ।
দোয়েল পাখির ঘ্যান্‌ঘ্যানানি আর কি লাগে ভালো ?
যেমন রূপে তেমন গুণে তেমনি আবার কালো ।
রূপ যদি চাও যাও না কেন মাছরাঙার কাছে,
অমন খাসা রঙের বাহার আর কি কারো আছে ?
মাছরাঙা ? তারেও কি আর পাখির মধ্যে ধরি
রকম সকম সঙের মতন, দেমাক দেখে মরি ।
পায়রা ঘুঘু কোকিল চড়াই চন্দনা টুনটুনি
কারে তোমার পছন্দ হয়, সেই কথাটি শুনি !
এই গুলো সব ছ্যাবলা পাখি নেহাৎ ছোট জাত-
দেখলে আমি তফাৎ হাটি অমনি পঁচিশ হাত ।
এতক্ষণে বুঝতে পারি ব্যাপারখানা কি যে-
সবার তুমি খুঁৎ পেয়েছ নিখুঁৎ কেবল নিজে !
মনের মতন সঙ্গী তোমার কপালে নাই লেখা
তাইতে তোমায় কেউ পোঁছে না তাইতে থাক একা ।

সুকুমার রায়
WRITTEN BY

সুকুমার রায়

সুকুমার রায় (১৮৮৭-১৯২৩) একজন বাঙালি শিশুসাহিত্যিক, লেখক, ছড়াকার, রম্যরচনাকার, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও সম্পাদক। তিনি ভারতীয় সাহিত্যে "ননসেন্স ছড়া"র প্রবর্তক হিসেবে পরিচিত।

সুকুমার রায় ১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কটিয়াদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন একজন বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক এবং মাতা বিদুনন্দিনী দেবী ছিলেন একজন গৃহিণী।

সুকুমার রায়ের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কটিয়াদি গ্রামে। ১৯০৭ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

সুকুমার রায়ের সাহিত্যজীবন শুরু হয় ১৯১২ সালে। তার প্রথম প্রকাশিত রচনা ছিল "খোকাবাবুর কেচ্ছা"। তার উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হল:

* আবোল তাবোল
* হযবরল
* পাগলা দাশু
* চলচ্চিত্তচঞ্চরী
* কিত্তনমামা
* অজগরবধ
* বিষাদসিন্ধু
* টেনিস খেলা

সুকুমার রায়ের রচিত ছড়াগুলি ছিল ছোটদের মনোরঞ্জন ও শিক্ষার এক অপূর্ব সমন্বয়। তিনি ছড়ার মাধ্যমে ছোটদের অক্ষর পরিচয়, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ের শিক্ষা দিতেন। তার রচিত ছড়াগুলি ছিল অত্যন্ত সহজবোধ্য, ছন্দময় ও হাস্যরসাত্মক।

সুকুমার রায়ের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র।

সুকুমার রায়ের সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার এবং সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

সুকুমার রায় ১৯২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মাত্র ৩৫ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

মন্তব্য করুন