সাহিত্য রস

সবচেয়ে বড় কবিতা, গল্প, ছন্দ এবং গান প্রকাশের ওয়েবসাইট

লড়াই-ক্ষ্যাপা

1
0

ওই আমাদের পাগলা জগাই, নিত্যি হেথায় আসে;
আপন মনে গুন্ গুনিয়ে মুচ্‌কি হাসি হাসে ।
চলতে গিয়ে হঠাৎ যেন ধমক লেগে থামে;
তড়াক্ করে লাফ দিয়ে যায় ডাইনে থেকে বামে।
ভীষন রোখে হাত গুটিয়ে সামলে নিয়ে কোচাঁ ;
“এইয়ো” বলে ক্ষ্যাপার মতো শুন্যে মারে খোচাঁ ।
চেঁচিয়ে বলে ,”ফাদঁ পেতেছ ? জগাই কি তায় পড়ে?
সাত জার্মান, জগাই একা, তবুও জগাই লড়ে।”
উৎসাহেতে গরম হয়ে তিড়িং বিড়িং নাচে,
কখনও যায় সামনে তেড়ে, কখনও যায় পাছে।
এলোপাতাড়ি ছাতার বাড়ি ধুপুস ধাপুস্ কত!
চক্ষু বুজে কায়দা খেলায় চর্কিবাজির মত।
লাফের চোটে হাঁপিয়ে ওঠে গায়েতে ঘাম ঝরে,
দুড়ুম ক’রে মাটির পরে লম্বা হয়ে পড়ে।
হাত পা ছুঁড়ে চেঁচায় খালি চোখ্‌টি ক’রে ঘোলা,
“জগাই মেলো হঠাৎ খেয়ে কামানের এক গোলা”!
এই না বলে মিনিট খানেক ছট্ফটিয়ে খুব,
মড়ার মত শক্ত হ’য়ে এক্কেবারে চুপ !
তার পরেতে সটান্ বসে চুলকে খানিক মাথা,
পকেট থেকে বার করে তার হিসেব লেখার খাতা।
লিখলে তাতে- “শোনরে জগাই, ভীষন লড়াই হলো
পাচ ব্যাটাকে খতম করে জগাই দাদা মোলো।”

সুকুমার রায়
WRITTEN BY

সুকুমার রায়

সুকুমার রায় (১৮৮৭-১৯২৩) একজন বাঙালি শিশুসাহিত্যিক, লেখক, ছড়াকার, রম্যরচনাকার, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও সম্পাদক। তিনি ভারতীয় সাহিত্যে "ননসেন্স ছড়া"র প্রবর্তক হিসেবে পরিচিত।

সুকুমার রায় ১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কটিয়াদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন একজন বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক এবং মাতা বিদুনন্দিনী দেবী ছিলেন একজন গৃহিণী।

সুকুমার রায়ের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কটিয়াদি গ্রামে। ১৯০৭ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

সুকুমার রায়ের সাহিত্যজীবন শুরু হয় ১৯১২ সালে। তার প্রথম প্রকাশিত রচনা ছিল "খোকাবাবুর কেচ্ছা"। তার উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হল:

* আবোল তাবোল
* হযবরল
* পাগলা দাশু
* চলচ্চিত্তচঞ্চরী
* কিত্তনমামা
* অজগরবধ
* বিষাদসিন্ধু
* টেনিস খেলা

সুকুমার রায়ের রচিত ছড়াগুলি ছিল ছোটদের মনোরঞ্জন ও শিক্ষার এক অপূর্ব সমন্বয়। তিনি ছড়ার মাধ্যমে ছোটদের অক্ষর পরিচয়, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ের শিক্ষা দিতেন। তার রচিত ছড়াগুলি ছিল অত্যন্ত সহজবোধ্য, ছন্দময় ও হাস্যরসাত্মক।

সুকুমার রায়ের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র।

সুকুমার রায়ের সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার এবং সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

সুকুমার রায় ১৯২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মাত্র ৩৫ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

মন্তব্য করুন