সাহিত্য রস

সবচেয়ে বড় কবিতা, গল্প, ছন্দ এবং গান প্রকাশের ওয়েবসাইট

পরিখা

1
0

স্বচ্ছ রাত্রি এনেছে প্লাবন, উষ্ণ নিবিড়
ধুলিদাপটের মরুচ্ছায়ায় ঘনায় নীল।
ক্লান্ত বুকের হৃৎস্পন্দন ক্রমেই ধীর
হয়ে আসে তাই শেষ সম্বল তোলো পাঁচিল।
ক্ষণভঙ্গুর জীবনের এই নির্বিরোধ
হতাশা নিয়েই নিত্য তোমার দাদন শোধ?

শ্রান্ত দেহ কি ভীরু বেদনার অন্ধকূপে
ডুবে যেতে কাঁদে মুক্তি মায়ায় ইতস্তত;
কত শিখণ্ডী জন্ম নিয়েছে নূতন রূপে?
দুঃস্বপ্নের প্রায়শ্চিত্ত চোরের মতো।
মৃত ইতিহাস অশুচি ঘুচায় ফল্গু-স্নানে;
গন্ধবিধুর রুধির তবুও জোয়ার আনে।

পথবিভ্রম হয়েছে এবার, আসন্ন মেঘ।
চলে ক্যারাভান ধূসর আঁধারে অন্ধগতি,
সরীসৃপের পথ চলা শুরু প্রমত্ত বেগ
জীবন্ত প্রাণ, বিবর্ণ চোখে অসম্মতি।
অরণ্য মাঝে দাবদাহ কিছু যায় না রেখে।
মনকে বাঁচাও বিপন্ন এই মৃত্যু থেকে।

সঙ্গীবিহনি দুর্জয় এই পরিভ্রমণ
রক্তনেশায় এনেছে কেবলই সুখাস্বাদ,
এইবারে করো মেরুদুর্গম পরিখা খনন
বাইরে চলুক অযথা অধীর মুক্তিবাদ।
দুর্গম পথে যাত্রী সওয়ার ভ্রান্তিবিহীন
ফুরিয়ে এসেছে তন্দ্রানিঝুম ঘুমন্ত দিন।

পালাবে বন্ধু? পিছনে তোমার ধূমন্ত ঝড়
পথ নির্জন, রাত্রি বিছানো অন্ধকারে।
চলো, আরো দূরে? ক্ষুদিত মরণ নিরন্তর,
পুরনো পৃথিবী জেগেছে আবার মৃত্যুপারে,
অহেতুক তাই হয়নি তোমার পরিখা খনন,
থেমে আসে আজ বিড়ম্বনায় শ্রান্ত চরণ।

মরণের আজ সর্পিল গতি বক্রবধির-
পিছনে ঝটিকা, সামনে মৃত্যু রক্তলোলুপ।
বারুদের দুম কালো ছায়া আনে, – তিক্ত রুধির ;
পৃথিবী এখনো নির্জন নয়- জ্বলন্ত ধূপ।
নৈঃশব্দ্যের তীরে তীরে আজ প্রতীক্ষাতে
সহস্র প্রাণ বসে আছে ঘিরে অস্ত্র হাতে।।

সুকান্ত ভট্টাচার্য
WRITTEN BY

সুকান্ত ভট্টাচার্য

সুকান্ত ভট্টাচার্য ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি কবি। তিনি ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতার কালীঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার অন্তর্গত ঊনশিয়া গ্রামে।

সুকান্ত মাত্র ১১ বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেন। তার প্রথম প্রকাশিত কবিতা "আমার গান" ১৯৩৭ সালের ২৭ অক্টোবর "কিশোর ভারতী" পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "ছাড়পত্র" ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত হয়।

সুকান্তের কবিতাগুলি সাধারণ মানুষের জীবন ও দুঃখ-কষ্টের কথা বলে। তিনি শোষিত, বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। তার কবিতায় মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান উঠে এসেছে।

সুকান্ত ছিলেন একজন প্রগতিশীল কবি। তিনি মার্কসবাদী দর্শনের অনুসারী ছিলেন। তার কবিতায় শ্রমিক-কৃষকের সংগ্রাম, সামাজিক বৈষম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সুর উঠে এসেছে।

সুকান্ত ভট্টাচার্য মাত্র ২০ বছর বয়সে ১৯৪৭ সালের ১৩ মে টি.বি. রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যু বাংলা সাহিত্যের এক অপূরণীয় ক্ষতি।

সুকান্ত ভট্টাচার্যের উল্লেখযোগ্য কবিতার মধ্যে রয়েছে:

* ছাড়পত্র
* পূর্বাভাস
* ঘুম নেই
* আমি একদিন তোমার নাম বলব
* কবিতা
* অগ্নিবীণা
* ময়না
* হে নমস্কার
* হে মাটি

সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতাগুলি আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। তার কবিতাগুলি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।

মন্তব্য করুন