পাল্কীর গান

110
0

পাল্কী চলে!
পাল্কী চলে!
গগন-তলে
আগুন জ্বলে!

স্তব্ধ গাঁয়ে
আদুল গায়ে
যাচ্ছে কারা
রৌদ্রে সারা

ময়রামুদি
চক্ষু মুদি’
পাটায় ব’সে
ঢুলছে ক’ষে।

দুধের চাঁছি
শুষছে মাছি,
উড়ছে কতক
ভনভনিয়ে।
আসছে কা’রা
হন্ হনিয়ে?
হাটের শেষে
রুক্ষ বেশে
ঠিক দু’পুরে
ধায় হাটুরে!

কুকুর গুলো
শুঁকছে ধূলো,
ধুঁকছে কেহ
ক্লান্ত দেহ।

গঙ্গা ফড়িং
লাফিয়ে চলে;
বাঁধের দিকে
সূর্য্য ঢলে।

পাল্কী চলে রে,
অঙ্গ টলেরে!
আর দেরি কত?
আর কত দূর?

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
লিখেছেন

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন একজন বাঙালি কবি, ছড়াকার, অনুবাদক, এবং ছান্দসিক। তিনি রবীন্দ্রযুগের অন্যতম বিশিষ্ট কবি। তাঁর কবিতায় ছন্দের কারুকাজ, শব্দ ও ভাষা যথোপযুক্ত ব্যবহারের কৃতিত্বের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে ছন্দের যাদুকর নামে আখ্যায়িত করেন।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৮২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতার নিমতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রজনীনাথ দত্ত ছিলেন একজন ব্যবসায়ী এবং মাতা সারদাসুন্দরী দেবী ছিলেন একজন গৃহবধূ। সত্যেন্দ্রনাথের পৈতৃক নিবাস বর্ধমানের চুপী গ্রামে।

সত্যেন্দ্রনাথ কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৯৯) এবং জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন (বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে এফএ (১৯০১) পাস করেন; কিন্তু পরে বিএ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। তিনি প্রথমে পিতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন এবং পরে ব্যবসা ছেড়ে কাব্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের প্রথম কাব্যগ্রন্থ "সবিতা" ১৯০০ সালে প্রকাশিত হয়। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল "সন্ধিক্ষণ" (১৯০৫), "বেণু ও বীণা" (১৯০৬), "হোমশিখা" (১৯০৭), "ফুলের ফসল" (১৯১১), "কুহু ও কেকা" (১৯১২), "তুলির লিখন" (১৯১৪), "মনিমঞ্জুষা" (১৯১৫), "পুণ্যস্নান" (১৯১৯), এবং "সোনার তরী" (১৯২১)।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতায় নানাবিধ ছন্দোনির্মাণ ও ছন্দ উদ্ভাবনে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। বাংলা ভাষার নিজস্ব বাগধারা ও ধ্বনি সহযোগে নতুন ছন্দসৃষ্টি তাঁর কবিপ্রতিভার মৌলিক কীর্তি। এজন্য তিনি "ছন্দের জাদুকর" ও "ছন্দোরাজ" নামে সাধারণ্যে পরিচিত।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতায় দেশাত্মবোধ, মানবপ্রীতি, ঐতিহ্যচেতনা, শক্তিসাধনা প্রভৃতি বিষয়গুলি প্রাধান্য পেয়েছে। তিনি মেথরদের মতো অস্পৃশ্য ও অবহেলিত সাধারণ মানুষ নিয়েও তিনি কবিতা লিখেছেন।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বিদেশি কবিতার সফল অনুবাদকও ছিলেন। তিনি আরবি, ফারসি, চীনা, জাপানি, ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার বহু কবিতা অনুবাদ করে বাংলা সাহিত্যএর বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধি সাধন করেন। অনুবাদের মাধ্যমে তিনি বিশ্বের কাব্যসাহিত্যের সঙ্গে বাংলার যোগাযোগ ঘটান।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত মাত্র ৩৯ বছর বয়সে ১৯২২ সালের ২৫ জুন কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যু বাংলা সাহিত্যের এক অপূরণীয় ক্ষতি।

মন্তব্য করুন