তিনি এসেছেন ফিরে

29
0

লতাগুল্ম, বাঁশঝাড়, বাবুই পাখির বাসা আর
মধুমতি নদীটির বুক থেকে বেদনাবিহ্বল
ধ্বনি উঠে মেঘমালা ছুঁয়ে
ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ে সারা বাংলায়।

এখন তো তিনি নেই, তবু সেই ধ্বনি আজ শুধু
তাঁরই কথা বলে;
মেঘনা নদীর মাঝি যখন নদীতে
ভাটিয়ালী সুর তোলে, তার
পালে লাগে দীর্ঘদেহী সেই পুরুষের দীর্ঘশ্বাস,
যখন কৃষক কাস্তে হাতে
ফসলের যৌবনের উদ্ভিন্ন উল্লাস দেখে মাতে,
তখন মহান সেই পুরুষের বিপুল আনন্দধ্বনি ঝরে
ফসলের মাঠে,
যখন কুমোর গড়ে মাটির কলস, ঘটিবাটি,
নানান পুতুল চাকা ঘোরাতে ঘোরাতে,
তখন সৃজনশিল্পে তার
জেগে ওঠে মহান নেতার স্বপ্নগুলি,
উচ্ছ্বসিত লাউডগা, কচুপাতা, কুয়োতলা, পোয়াতি
কুমোর বউ।

ওরা তাঁকে হত্যা ক’রে ভেবেছিল তিনি
সহজে হবেন লুপ্ত উর্ণাজাল আর ধোঁয়াশায়,
মাটি তাঁকে দেবে চাপা বিস্মৃতির জন্মান্ধ পাতালে-
কিন্তু তিনি আজ সগৌরবে
এসেছেন ফিরে দেশপ্রেমিকের দীপ্র উচ্চারণে,
সাধারণ মানুষের প্রখর চৈতন্যে,
শিল্পীর তুলিতে, গায়কের গানে, কবির ছন্দের
আন্দোলনে,
রৌদ্রঝলসিত পথে মহামিছিলের পুরোভাগে।

শামসুর রহমান
WRITTEN BY

শামসুর রহমান

শামসুর রহমান ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি, সাংবাদিক, এবং রাজনীতিবিদ। তিনি বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে বিবেচিত। শামসুর রহমান ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি সাংবাদিক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেন। তিনি ১৯৫৫ সালে জোহরা বেগমকে বিয়ে করেন। শামসুর রহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ "দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে" ১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয়। তিনি তার জীবদ্দশায় ৪০টিরও বেশি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার কবিতায় তিনি দেশপ্রেম, মানবতাবাদ, এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের বিষয়গুলিকে তুলে ধরেছেন। শামসুর রহমান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে বিবেচিত। তিনি তার কবিতা "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো পদ্মা-মেঘনা-যমুনা" মুক্তিযুদ্ধের স্লোগানে পরিণত হয়। শামসুর রহমান তার কবিতা, সাহিত্যকর্ম, এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তিনি ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, এবং ২০০০ সালে একুশে পদক লাভ করেন। শামসুর রহমান ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বাংলাদেশের সাহিত্যের এক অমর কবি হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

মন্তব্য করুন