আগামীকাল আমি সবুজ চিঠিখানা পোস্ট করবো

একদিন শহরকেই স্বপ্নময় ভাবতুম
তাই নিসর্গের বুকে সমূলে প্রোথিত কোরে
অবহেলার নীল চাকু ‘আসবো না কখনো আর’
বোলেই সুনীল স্টিমারে আমি গন্তব্যে এলাম।

কিশোরের দুরন্ত সকালে গ্রামের সবুজ
ঘাসের কার্পেটে ঘুম ভাঙা চোখ এবং
স্নেহের শীতল হাতে মা জামায় বোতাম লাগিয়ে
বলতেন ‘খরায় যাসনে’ এসব এখন মনে নেই
অথবা মনে করারও কোনো প্রয়োজন হয় না।

এখন আমি ব্যস্ত নাগরিক এক অযথা
সময় নষ্ট করা চলে না; নাগরিক বন্ধুরা
এলেই বেরিয়ে যাই কাজে হাতে অনেক কাজ এখন
কাল বড়দির চিঠি পেয়েছি ‘গ্রামে এসে বেড়িয়ে যা’।

রাজপথে দুরন্ত জনস্রোতে ভেসে যাই, কেন জানি মাকেই
বারবার মনে পড়ে; দ্বিখন্ডিত দৈনিক সময়ে
ওদের মনে হয় শুধু, বড়দির চিঠির উত্তর লিখি
‘শীঘ্রই আসছি আমি’— কোলাহল গ্রাস করে আমাকে।

আমি সবুজ ট্রেনটির অপেক্ষায় বোসে থাকি,
সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম কোরে কবে কোন সোনালি,
দিনে প্রতীক্ষিত ট্রেন আমাকে নিয়ে যাবে স্বর্নীল
গ্রামে! বড়দি এবং মা অফুরন্ত হাসবে আমি জানি

আগামীকালই আমার সবুজ চিঠিখানা আমাকে
পোস্ট করতেই হবে।

রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
লিখেছেন

রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (১৬ অক্টোবর ১৯৫৬ – ২১ জুন ১৯৯১) ছিলেন একজন বাংলাদেশি কবি, গীতিকার, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সাংবাদিক, এবং রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কবি হিসেবে পরিচিত। তার কবিতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা, প্রেম, প্রকৃতি, ও মানবতাবাদের বলিষ্ঠ প্রকাশ ঘটেছে।

শহিদুল্লাহ ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শেখ ওয়ালিউল্লাহ ছিলেন একজন চিকিৎসক এবং মা শিরিয়া বেগম ছিলেন গৃহিণী। তিনি বাগেরহাটের মংলা উপজেলার মিঠেখালি গ্রামে তাঁর নানা বাড়িতে বেড়ে ওঠেন।

শহিদুল্লাহ ১৯৭৩ সালে ঢাকা ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্সসহ এমএ পাস করেন।

শহিদুল্লাহ ১৯৭০-এর দশকে সাহিত্যচর্চায় আত্মপ্রকাশ করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "উপদ্রুত উপকূল" ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি "ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম", "মানুষের মানচিত্র", "মৌলিক মুখোশ", "বিষ বিরিক্ষের বীজ", "ছোবল", "রুদ্রসমগ্র", "শ্রেষ্ঠ কবিতা"সহ আরও বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার কবিতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা, প্রেম, প্রকৃতি, ও মানবতাবাদের বলিষ্ঠ প্রকাশ ঘটেছে।

শহিদুল্লাহ কবিতা ছাড়াও গল্প, নাটক, গান, ও সাংবাদিকতায়ও সমানভাবে সফল ছিলেন। তার গল্পের মধ্যে "অনির্বাণ", "হীরামন", "অগ্নিগর্ভ", "হাজার বছরের নীরবতা", ও "সীমানা প্রাচীর" উল্লেখযোগ্য। তার নাটকের মধ্যে "একজন সৈনিকের চিঠি", "একজন বীর সন্তান", "সোনালি কাঁকড়ার দেশে", ও "লাল গম্বুজ" উল্লেখযোগ্য। তার গানগুলি বাংলাদেশের জনপ্রিয় গানগুলির মধ্যে অন্যতম।

শহিদুল্লাহ ১৯৮১ সালে বিখ্যাত লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন। কিন্তু তাদের সেই দাম্পত্যজীবন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৮৬ সালে তারা বিবাহবিচ্ছেদ করেন।

শহিদুল্লাহ ১৯৯১ সালের ২১ জুন মাত্র ৩৫ বছর বয়সে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর তাকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কবি হিসেবে গণ্য করা হয়।

শহিদুল্লাহর সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে এক অমূল্য সম্পদ। তার কবিতা, গল্প, নাটক, গান, ও সাংবাদিকতা বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় সমৃদ্ধি এনেছে। তার সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা, প্রেম, প্রকৃতি, ও মানবতাবাদের বাণী ছড়িয়ে দিয়েছেন।

মন্তব্য করুন