লীলা কমল

70
0

বক্ষে উতল ঘন মধু রস মর্ম সুরভি ভোর
প্রভাত রবির প্রেম অঞ্জনে পরানে রঙের ঘোর।
মেলিয়াছি আঁখি আমি জলবালা সূর্য-স্বয়ম্বরা
উর্ধ্বে পসারি মৃণাল গ্রীবাটি
হেরিতে আসিনু তরুন দিবাটি
হেরিতে আসিনু সোনার কিরণে কনকোজ্জ্বল ধরা।

জ্যোতির্ময়ের রূপ বারতায় ধ্বনিত পুবের পুর
নিতল জলের তল ভেদি বুকে বেজেছে যে সেই সুর।
কুঞ্জ কাননে ফূুল মালঞ্চে লই নাই আমি ঠাই
পঙ্ক আসনে সাধন নিত্য
ইষ্ট আমার নব আদিত্য
সলিল শয়নে সমাধি হলেও শিশির দহে না তাই।

সপ্ত বরণে রবি নিতে আজ গুণ্ঠন দিছি খুলি
লিলায়িত করি সুন্দর তনু শূন্যে ধরেছি তুলি।
আসে মৌমাছি, মধুপ মানব
লুটে লয়ে যায় সব বৈভব
আমি ভাবি মোর আলোর দেবতা কখন আসিবে বুকে
তনু-মন-ধন অর্পিয়া তাঁরে ঝবিব সকৌতুকে ।

উৎসুক মোর উন্মুখ মুখ সুখে অবনত হবে
প্রিয় বিরহের ব্যাকুল বেলায় সন্ধ্যা নামিবে যবে।
অনন্ত বৃন্ত এ আননে মম
বিদায় চুমাটি দিবে প্রিয়তম
অস্তরাগের অনুরাগে মোর অঙ্গ পরিবে ঢলি
সার্থক হবে লীলা কমলের অন্তিম অঞ্জলি ।।

রাধারাণী দেবী
লিখেছেন

রাধারাণী দেবী

রাধারাণী দেবী বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বাঙালি কবি। ভাষার মাধুর্যে ভাবের স্নিগ্ধতায় আর ছন্দের সাবলীল দক্ষতায় 'অপরাজিতা দেবী' ছদ্মনামে সাহিত্য জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী মহিলা কবি।

রাধারাণী দেবী ১৩ নভেম্বর, ১৯০৩ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের কর্মী ও মাতা ছিলেন গৃহিণী। রাধারাণী দেবীর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বাড়িতে। পরে তিনি কলকাতার বেথুন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং বেথুন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।

রাধারাণী দেবীর লেখা প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯১৩ সালে 'মানসী' পত্রিকায়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অপরাজিতা' প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালে। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:

* 'সুন্দর ও ভালোবাসা' (১৯২৬)
* 'হৃদয়ের কথা' (১৯২৯)
* 'প্রকৃতির কথা' (১৯৩২)
* 'সত্য ও সুন্দর' (১৯৩৫)
* 'জীবন ও মৃত্যু' (১৯৪২)
* 'অঞ্জলি' (১৯৪৭)
* 'আলো ও অন্ধকার' (১৯৫০)
* 'মন ও জীবন' (১৯৫২)

রাধারাণী দেবীর কবিতাগুলির মধ্যে প্রেম, প্রকৃতি, দেশপ্রেম, মানবতাবাদ ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। তার কবিতাগুলির ভাষা ও ছন্দ অত্যন্ত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। তিনি বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে এক অনন্য স্থান দখল করে আছেন।

রাধারাণী দেবীর সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি ১৯৬৪ সালে সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার, ১৯৬৮ সালে পদ্মভূষণ, ১৯৭৩ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার এবং ১৯৮২ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

রাধারাণী দেবী ১৯৮৯ সালের ৩০ নভেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য জগত এক অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

রাধারাণী দেবীর কবিতার কিছু বিখ্যাত লাইন:

* "প্রিয়তম, আমি তোমার অপেক্ষায় বসে আছি,
* যেন প্রদীপের শিখায় বসে থাকে মশা।"
* "আমার ভালোবাসা তোমার জন্য,
* আমার গান তোমার জন্য।"
* "হে প্রকৃতি, তুমি আমার মা,
* তোমার কোলে আমি সুখী।"
* "হে দেশ, তোমার জন্য আমার জীবন,
* তোমার জন্য আমার মৃত্যু।"

রাধারাণী দেবীর কবিতাগুলি আজও পাঠকদের মন ছুঁয়ে যায়। তার কবিতাগুলি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।

মন্তব্য করুন