সাহিত্য রস

সবচেয়ে বড় কবিতা, গল্প, ছন্দ এবং গান প্রকাশের ওয়েবসাইট

নর ও নারী

1
0

তোমার কর্মের ক্ষেত্রে আছ যেথা অহরহ মাতি
ব্যস্ত মন ন্যস্ত নিজ কাজে
হে বন্ধু সেথায় তুমি কর নাই মোরে তব সাথী
ডাক নাই সে ভুবন মাঝে।

আননে বুদ্ধির দীপ্তি, ললাটে চিন্তার দিব্য রেখা
দুর্জ্ঞেয় সন্ধানে যবে, যোগীসম মগ্ন রহ একা
জটিল সমস্যা মাঝে সমাহিত সেই মূর্তি দেখা
কী মোহ সে কিছু জানি না যে।

হে জ্ঞানী! তোমার জ্ঞান কর্ম মাঝে সমন্বয় লভি
রচে যেথা ধ্যানলব্ধ ফল
সেথা তো আপনি তুমি দেখ নাই আপনার ছবি
অপরূপ সে রূপ উজ্জ্বল।

দুর্গম সুদূর তীর্থে মন্দিরের রত্মদেবী পরে
দূর হতে দেবতারে দেখেছ কি ক্ষণেকের তরে?
দেখেছ সূর্যের দীপ্তি, দিবসের দ্বিতীয় প্রহরে?
চিত্ত তাহে হয়নি বিহবল।

দূর হতে শ্রদ্ধা ভরে সবিস্ময় গরব-গৌরবে
সসম্ভ্রমে করি নমস্কার।
সমস্ত হৃদয়খানি ভরি ওঠে সৌভাগ্য সৌরভে
উথলে পুলক পারাবার।

তোমার সকাল-সন্ধ্যা রূপে-রসে বর্ণে-গন্ধে গানে
সুন্দর করি যে আমি প্রাণের পরমামৃত দানে।
প্রহরের খরদাহ জুড়াইতে এস এইখানে
সার্থকতা সেই তো আমার।

হেথায় যখন থাকো প্রভাতের স্নিগ্ধ সমীরণে
সে রূপ একান্ত মম চিনা
প্রশান্ত মুরতি তব ভরি রহে আনন্দি কিরণে
মুহূর্ত চলে না আমা বিনা।

সন্ধ্যায় সুখের পাত্রে পূর্ণ হয় মাধুর্যের ভার
মর্মের গোপন হর্মে মুক্ত করি দাও রুদ্ধ দ্বার।
সেখানে কেবল শুধু তুমি আমি, কেহ নাহি আর
ধরণী বাহিরে রহে দীনা।

কাছে এলে ভালোবাসি কাছে পেলে সুনিবিড় প্রেমে
নিবেদিয়া ধরি মোর সব
দূর হতে শ্রদ্ধাভরে লভি তব দীপ্যমান ক্ষেমে
মনে হয় তুমি সুদুর্লভ
জীবন প্রাঙ্গণ তব সুদূর বিস্তৃত, তারি মাঝে
আমারে আননি টানি জনতার কোলাহলে কাজে
দিয়েছ সেথায় ঠাই যেথা তব সুখ দুখ রাজে
সেই মম চরম গরব।

রাধারাণী দেবী
WRITTEN BY

রাধারাণী দেবী

রাধারাণী দেবী বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বাঙালি কবি। ভাষার মাধুর্যে ভাবের স্নিগ্ধতায় আর ছন্দের সাবলীল দক্ষতায় 'অপরাজিতা দেবী' ছদ্মনামে সাহিত্য জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী মহিলা কবি।

রাধারাণী দেবী ১৩ নভেম্বর, ১৯০৩ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের কর্মী ও মাতা ছিলেন গৃহিণী। রাধারাণী দেবীর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বাড়িতে। পরে তিনি কলকাতার বেথুন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং বেথুন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।

রাধারাণী দেবীর লেখা প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯১৩ সালে 'মানসী' পত্রিকায়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অপরাজিতা' প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালে। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:

* 'সুন্দর ও ভালোবাসা' (১৯২৬)
* 'হৃদয়ের কথা' (১৯২৯)
* 'প্রকৃতির কথা' (১৯৩২)
* 'সত্য ও সুন্দর' (১৯৩৫)
* 'জীবন ও মৃত্যু' (১৯৪২)
* 'অঞ্জলি' (১৯৪৭)
* 'আলো ও অন্ধকার' (১৯৫০)
* 'মন ও জীবন' (১৯৫২)

রাধারাণী দেবীর কবিতাগুলির মধ্যে প্রেম, প্রকৃতি, দেশপ্রেম, মানবতাবাদ ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। তার কবিতাগুলির ভাষা ও ছন্দ অত্যন্ত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। তিনি বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে এক অনন্য স্থান দখল করে আছেন।

রাধারাণী দেবীর সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি ১৯৬৪ সালে সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার, ১৯৬৮ সালে পদ্মভূষণ, ১৯৭৩ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার এবং ১৯৮২ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

রাধারাণী দেবী ১৯৮৯ সালের ৩০ নভেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য জগত এক অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

রাধারাণী দেবীর কবিতার কিছু বিখ্যাত লাইন:

* "প্রিয়তম, আমি তোমার অপেক্ষায় বসে আছি,
* যেন প্রদীপের শিখায় বসে থাকে মশা।"
* "আমার ভালোবাসা তোমার জন্য,
* আমার গান তোমার জন্য।"
* "হে প্রকৃতি, তুমি আমার মা,
* তোমার কোলে আমি সুখী।"
* "হে দেশ, তোমার জন্য আমার জীবন,
* তোমার জন্য আমার মৃত্যু।"

রাধারাণী দেবীর কবিতাগুলি আজও পাঠকদের মন ছুঁয়ে যায়। তার কবিতাগুলি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।

মন্তব্য করুন