উৎকন্ঠিতা

50
0

এখনো কেন সে এল না? বাজে যে ছটা
মিছে আয়োজন, মিছে সাজগোছ ঘটা।
আর একবার ছাদে উঠে নয় দেখি
পূবদিককার গলি দিয়ে আসছে কি?

চিঠিতে লিখেছে আসবেই ঠিক আজ রবিবার সাঁঝে
কেন আসছে না? হলো তো সময়। ভুলে তো যায়নি কাজে?
ওই না শুনছি রিং
সাইকেল বেল কানে যেনো এল, টিংটিং ঠিংঠিং।

কত যে কষ্টে করি তার সাথে দেখা
বিধাতা জানেন আর আমি জানি একা।
অভিভাবকেরা বারণ করেছে ডেকে
মণীশের সাথে মিশ না এখন থেকে।
দুজনেই বড় হয়েছ তোমরা, নয় আর ছোট তত
বেশি মেলামেশা দেখায় না ভাল, আগের দিনের মত।

অর্থটা বড় সোজা
ভালো যে আমরা বেসেচি ক্রমশ বাইরেও গেছে বোঝা।
বড় আশা করে সারা সপ্তাহে ধরে
চেয়ে আছি পথ এই সাঁঝটির তরে।ে

নানা ছল করে আছি বাড়ি আজ একা
নিষ্ঠুর মোটে দিলে না লুকিয়ে দেখ।
সদরের কড়া নাড়লে কে যেন মনে হলো। দেখে আসি
কই? কেউ নয়, মনের ভ্রান্তি । দুঃখেও আসে হাসি।
কী ব্যথা আমার বুকে
সে যদি বুঝতো এত দূরে সরে পারতো থাকতে সুখে?
ওই আসে বুঝি। চৌমাথা মোড়ে ও-ই
কভার প্যাকেটে হাতে কি রয়েছে? বই?
বার্নার্ড শর লেটেষ্ট নাটক খানা
নিশ্চয় কিনে আনছে আমার জানা।
কোঁকড়ানো চুল। সোনালী মুগার ঢিলে পাঞ্জাবি গায়ে
চলার ধরণ ঠিক তারই মত চঞ্চল দৃঢ় পায়ে।
একি? এত নয়? ভুল।
তারি মত জামা। তারি মত হাঁটা। তেমনি কোঁকড়া চুল।

কই? এখনও মিললনা দেখা মোটে
চোখে শুধু শুধু জল কেন ভরে ওঠে?

বুকের ভিতরে গুমড়ে কান্না কী যে
একি অসহায় নিরুপায় আমি নিজে।
সত্যি তবে ব্যর্থ কি এই চেয়ে থাকা পথ পানে
এলনা তাহলে? সত্যি এল না? কী আওয়াজ এল কানে?
বাইরের জানালায়
আঙুরের টোকা পড়ছে কি? না তো। হাওয়া ঠেলা মেরে যায়।

রাধারাণী দেবী
লিখেছেন

রাধারাণী দেবী

রাধারাণী দেবী বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বাঙালি কবি। ভাষার মাধুর্যে ভাবের স্নিগ্ধতায় আর ছন্দের সাবলীল দক্ষতায় 'অপরাজিতা দেবী' ছদ্মনামে সাহিত্য জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী মহিলা কবি।

রাধারাণী দেবী ১৩ নভেম্বর, ১৯০৩ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের কর্মী ও মাতা ছিলেন গৃহিণী। রাধারাণী দেবীর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বাড়িতে। পরে তিনি কলকাতার বেথুন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং বেথুন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।

রাধারাণী দেবীর লেখা প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯১৩ সালে 'মানসী' পত্রিকায়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অপরাজিতা' প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালে। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:

* 'সুন্দর ও ভালোবাসা' (১৯২৬)
* 'হৃদয়ের কথা' (১৯২৯)
* 'প্রকৃতির কথা' (১৯৩২)
* 'সত্য ও সুন্দর' (১৯৩৫)
* 'জীবন ও মৃত্যু' (১৯৪২)
* 'অঞ্জলি' (১৯৪৭)
* 'আলো ও অন্ধকার' (১৯৫০)
* 'মন ও জীবন' (১৯৫২)

রাধারাণী দেবীর কবিতাগুলির মধ্যে প্রেম, প্রকৃতি, দেশপ্রেম, মানবতাবাদ ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। তার কবিতাগুলির ভাষা ও ছন্দ অত্যন্ত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। তিনি বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে এক অনন্য স্থান দখল করে আছেন।

রাধারাণী দেবীর সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি ১৯৬৪ সালে সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার, ১৯৬৮ সালে পদ্মভূষণ, ১৯৭৩ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার এবং ১৯৮২ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

রাধারাণী দেবী ১৯৮৯ সালের ৩০ নভেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য জগত এক অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

রাধারাণী দেবীর কবিতার কিছু বিখ্যাত লাইন:

* "প্রিয়তম, আমি তোমার অপেক্ষায় বসে আছি,
* যেন প্রদীপের শিখায় বসে থাকে মশা।"
* "আমার ভালোবাসা তোমার জন্য,
* আমার গান তোমার জন্য।"
* "হে প্রকৃতি, তুমি আমার মা,
* তোমার কোলে আমি সুখী।"
* "হে দেশ, তোমার জন্য আমার জীবন,
* তোমার জন্য আমার মৃত্যু।"

রাধারাণী দেবীর কবিতাগুলি আজও পাঠকদের মন ছুঁয়ে যায়। তার কবিতাগুলি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।

মন্তব্য করুন