অভ্যুদয়

53
0

হৃদয়ের মাঝে উটিল যেদিন কলঙ্কহীন চাদিঁমা সম
প্রথম প্রেমের স্বপন মম
অন্ধপ্রানের গারো-যবনিকা
ধীরে গেল সরি আলোকের শিখা
বিভাসিত করি তুলিল হৃদয়
কি মনোরম
আঁধারে জীবনে এলো প্রমোদয়।

রজনীর গারো তিমিরের রাশি
নিমেষে বিনাশী
পূর্বপথে সূর্য ঝলকে অরুন রথে
তেমনি মহান অপূর্বতর
তমশা ভেদিয়া জ্যোতিনির্ঝর
উৎসার হল আঁধারে জীবন
আকাশ হতে
এলো নগর রূপে নিখিল ভুবন প্রানের পথে।

তুষার শুভ্র তীব্র শীতের নৃত্য গীতের
হিমেল সুরে
মরমের বীণা ছিল তো পুরে।
নির্মম বেগে উত্তর বায়ু
শুষিয়া লয়েছে যৌবন আয়ু।
চির বিবর্ণ মনো বনে সদা
নিহার ঝুরে
ছিল কুহেলির কান্না একদা
সকল সুরে।

এলো বসন্ত হিম কুজ্ঝটি গেল টুটি টুটি
বহিলো ধীরে
দখিনা মলয়ে কানন ঘিরে
কচি পল্লবে কিশলয়ে ফুলে
তরুলতা তৃণ ওঠে দুলে দুলে।
নব ফাগুনের উৎসব ঘটা
হিয়ার তীরে।
কুসুমে কুসুমে বরণের ছটা
ফুটিলো ধীরে।

ঘনমাধুর যে পুরিল হৃদয় প্রাণ তন্ময়
অমৃত রসে।
স্বর্গের সুধা পরানে পশে।
এলো আনন্দ সুন্দর বেশে
সোনার কাঠিটি ছোঁয়াইল হেসে
চির নিদ্রিতা পাতাল বালার
সুপ্তি খসে।
প্রেম প্রসূনের বরণ মালার
পরশ রসে।

রাধারাণী দেবী
লিখেছেন

রাধারাণী দেবী

রাধারাণী দেবী বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বাঙালি কবি। ভাষার মাধুর্যে ভাবের স্নিগ্ধতায় আর ছন্দের সাবলীল দক্ষতায় 'অপরাজিতা দেবী' ছদ্মনামে সাহিত্য জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী মহিলা কবি।

রাধারাণী দেবী ১৩ নভেম্বর, ১৯০৩ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের কর্মী ও মাতা ছিলেন গৃহিণী। রাধারাণী দেবীর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বাড়িতে। পরে তিনি কলকাতার বেথুন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং বেথুন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।

রাধারাণী দেবীর লেখা প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯১৩ সালে 'মানসী' পত্রিকায়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অপরাজিতা' প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালে। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:

* 'সুন্দর ও ভালোবাসা' (১৯২৬)
* 'হৃদয়ের কথা' (১৯২৯)
* 'প্রকৃতির কথা' (১৯৩২)
* 'সত্য ও সুন্দর' (১৯৩৫)
* 'জীবন ও মৃত্যু' (১৯৪২)
* 'অঞ্জলি' (১৯৪৭)
* 'আলো ও অন্ধকার' (১৯৫০)
* 'মন ও জীবন' (১৯৫২)

রাধারাণী দেবীর কবিতাগুলির মধ্যে প্রেম, প্রকৃতি, দেশপ্রেম, মানবতাবাদ ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। তার কবিতাগুলির ভাষা ও ছন্দ অত্যন্ত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। তিনি বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে এক অনন্য স্থান দখল করে আছেন।

রাধারাণী দেবীর সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি ১৯৬৪ সালে সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার, ১৯৬৮ সালে পদ্মভূষণ, ১৯৭৩ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার এবং ১৯৮২ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

রাধারাণী দেবী ১৯৮৯ সালের ৩০ নভেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য জগত এক অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

রাধারাণী দেবীর কবিতার কিছু বিখ্যাত লাইন:

* "প্রিয়তম, আমি তোমার অপেক্ষায় বসে আছি,
* যেন প্রদীপের শিখায় বসে থাকে মশা।"
* "আমার ভালোবাসা তোমার জন্য,
* আমার গান তোমার জন্য।"
* "হে প্রকৃতি, তুমি আমার মা,
* তোমার কোলে আমি সুখী।"
* "হে দেশ, তোমার জন্য আমার জীবন,
* তোমার জন্য আমার মৃত্যু।"

রাধারাণী দেবীর কবিতাগুলি আজও পাঠকদের মন ছুঁয়ে যায়। তার কবিতাগুলি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।

মন্তব্য করুন