এখন মধ্যরাত

29
0

এখন মধ্যরাত।
তখন দুপুরে রাজপথে ছিলো মানুষের পদপাত।
মিছিলে মিছিলে টলমল ছিলো সারাদিন রাজধানী।
এখন কেবল জননকূল ছল বুড়িগঙ্গার পানি
শান্ত নীরব
নিদ্রিত সব।
ওই একজন জানালায় রাখে তার বিনিদ্র হাত
ছিলো একদিন তার
উজ্জ্বল দিন, ছিলো যৌবন ছিলো বহু চাইবার।
সারা রাত চষে ফিরেছে শহর খুঁজেছে সে ভালোবাসা।
পেতেছে সে হাত জীবনের কাছে ছিলো তারও প্রত্যাশা পাওয়া না পাওয়ার
প্রশ্নে হাওয়ার
বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে এখন সারারাত হাহাকার।

পথে ওড়ে ধুলো, ছাই ওড়ে শুধু পথে যে আগুন ছিলো
একদা সে জ্বেলে ছিলো।
হৃদয়ে এখন সৌধের ভাঙা টুকরো আছাড় খায়।
আলো নিভে যায়, নিভে যায় আলো একে একে জানালায়।
থেমে যায় গান
তারপরও প্রাণ
বাঁশিটির মতো বেজে চলে যেন সবই আছে সবই ছিলো।

সৈয়দ শামসুল হক
লিখেছেন

সৈয়দ শামসুল হক

সৈয়দ শামসুল হক ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী সাহিত্যিক। তাকে "সব্যসাচী লেখক" বলা হয় কারণ তিনি কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, অনুবাদ তথা সাহিত্যের সকল শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্য পরিচিত ছিলেন।

তিনি ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

তার সাহিত্যিক জীবন ১৯৫১ সালে ফজলে লোহানী সম্পাদিত 'অগত্যা' পত্রিকায় একটি গল্প প্রকাশের মাধ্যমে শুরু হয়। এরপর তিনি অসংখ্য কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প এবং অনুবাদ রচনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য রচনাগুলির মধ্যে রয়েছে:

* **কবিতা:** বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা, নদীর কাছে, নীল আকাশের কাছে, অচেনা
* **উপন্যাস:** খেলারাম খেলে যা, তিন পয়সার জ্যোছনা, জলেশ্বরী, অদৃশ্য বস্তু
* **নাটক:** সাতটি নাটক, হডসনের বন্দুক, হ্যামলেট
* **গল্প:** শ্রেষ্ঠ গল্প, অচেনা, নীল আকাশের কাছে
* **অনুবাদ:** ওথেলো, হ্যামলেট, ম্যাকবেথ, রিচার্ড III

তার সাহিত্যকর্মে তিনি বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের আবেগ-অনুভূতি-বিকার সবই খুব সহজ কথা ও ছন্দে উঠে এসেছে। তিনি বাঙালি সাহিত্যে আধুনিকতার অন্যতম পথিকৃত।

সৈয়দ শামসুল হক ১৯৬৬ সালে মাত্র ৩১ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একুশে পদক, ২০০৫ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার এবং ২০০৭ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।

তিনি ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

মন্তব্য করুন