সৎপাত্র

5
0

শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে—
তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে ?
গঙ্গারামকে পাত্র পেলে ?
জানতে চাও সে কেমন ছেলে ?
মন্দ নয় সে পাত্র ভালো
রঙ যদিও বেজায় কালো ;
তার উপরে মুখের গঠন
অনেকটা ঠিক পেঁচার মতন ;
বিদ্যে বুদ্ধি ? বলছি মশাই—
ধন্যি ছেলের অধ্যবসায় !
উনিশটিবার ম্যাট্রিকে সে
ঘায়েল হয়ে থামল শেষে ।
বিষয় আশয় ? গরীব বেজায়—
কষ্টে–সৃষ্টে দিন চলে যায় ।

মানুষ তো নয় ভাইগুলো তার—
একটা পাগল একটা গোঁয়ার ;
আরেকটি সে তৈরী ছেলে,
জাল করে নোট গেছেন জেলে ।
কনিষ্ঠটি তবলা বাজায়
যাত্রাদলে পাঁচ টাকা পায় ।
গঙ্গারাম তো কেবল ভোগে
পিলের জ্বর আর পাণ্ডু রোগে ।
কিন্তু তারা উচ্চ ঘর,
কংসরাজের বংশধর !
শ্যাম লাহিড়ী বনগ্রামের
কি যেন হয় গঙ্গারামের ।—
যহোক, এবার পাত্র পেলে,
এমন কি আর মন্দ ছেলে ?

সুকুমার রায়
WRITTEN BY

সুকুমার রায়

সুকুমার রায় (১৮৮৭-১৯২৩) একজন বাঙালি শিশুসাহিত্যিক, লেখক, ছড়াকার, রম্যরচনাকার, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও সম্পাদক। তিনি ভারতীয় সাহিত্যে "ননসেন্স ছড়া"র প্রবর্তক হিসেবে পরিচিত।

সুকুমার রায় ১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কটিয়াদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন একজন বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক এবং মাতা বিদুনন্দিনী দেবী ছিলেন একজন গৃহিণী।

সুকুমার রায়ের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কটিয়াদি গ্রামে। ১৯০৭ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

সুকুমার রায়ের সাহিত্যজীবন শুরু হয় ১৯১২ সালে। তার প্রথম প্রকাশিত রচনা ছিল "খোকাবাবুর কেচ্ছা"। তার উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হল:

* আবোল তাবোল
* হযবরল
* পাগলা দাশু
* চলচ্চিত্তচঞ্চরী
* কিত্তনমামা
* অজগরবধ
* বিষাদসিন্ধু
* টেনিস খেলা

সুকুমার রায়ের রচিত ছড়াগুলি ছিল ছোটদের মনোরঞ্জন ও শিক্ষার এক অপূর্ব সমন্বয়। তিনি ছড়ার মাধ্যমে ছোটদের অক্ষর পরিচয়, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ের শিক্ষা দিতেন। তার রচিত ছড়াগুলি ছিল অত্যন্ত সহজবোধ্য, ছন্দময় ও হাস্যরসাত্মক।

সুকুমার রায়ের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র।

সুকুমার রায়ের সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার এবং সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

সুকুমার রায় ১৯২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মাত্র ৩৫ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

মন্তব্য করুন