ছায়ার পুতুল

89
0

যখন আমরা দু’জন সন্ধ্যেবেলা
কোথাও নিবিড় বসে থাকি মুখোমুখি,
বুঝি না কী করে সময় যে বয়ে যায়,
সময়ের দানে আমরা তবুও সুখী।

হাতে হাত রেখে, চেয়ে থেকে, কথা বলে,
এবং নীরবে কাটে বিহ্বল বেলা;
কখনো হঠাৎ কী-যে হয় নিমেষেই
ছায়ায় মলিন দীপ্ত মিলনমেলা।

আমার অতীত কখনো সখনো কালো
প্রেতের মতোই চেপে ধরে শ্বাসনালী;
তোমার একটি কি দু’টি ঘটনা ক্রূর
দংশনে করে আমাকেই ফালি ফালি

বুঝি এই সব ছায়ার পুতুল শুধু,
তবু কেন মিছে এমন মুষড়ে পড়ি?
আমার প্রহর কেন হাহাকার হয়?
কেন বারবার বেঁচে উঠি, বেঁচে মরি?

কখনো কখনো এমন নিঃস্ব লাগে,
যেন মরুভূমির বুকে প’ড়ে থাকি একা
কিন্তু হঠাৎ কোন্‌ সে ইন্দ্রজালে
ক্ষুধিত আঁধারে উদিত চন্দ্রলেখা।

ছায়া-পুতুলেরা আমার জগৎ থেকে
নেবে কি ছিনিয়ে ঋদ্ধ সোনালি দিন?
এই যে এখনো রয়েছে তোমার প্রেম,
কী ক’রে শুধব সিএ দুর্লভ ঋণ?

এক রাতে তুমি বললে, ‘ছায়ারা নেই,
কবর দিয়েছি; আমরা দু’জন আছি।
যতদিন জ্বলে আমাদের প্রেম-দীপ,
এস ততদিন নিজেদের মতো বাঁচি।

শামসুর রহমান
লিখেছেন

শামসুর রহমান

শামসুর রহমান ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি, সাংবাদিক, এবং রাজনীতিবিদ। তিনি বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে বিবেচিত। শামসুর রহমান ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি সাংবাদিক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেন। তিনি ১৯৫৫ সালে জোহরা বেগমকে বিয়ে করেন। শামসুর রহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ "দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে" ১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয়। তিনি তার জীবদ্দশায় ৪০টিরও বেশি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার কবিতায় তিনি দেশপ্রেম, মানবতাবাদ, এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের বিষয়গুলিকে তুলে ধরেছেন। শামসুর রহমান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে বিবেচিত। তিনি তার কবিতা "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো পদ্মা-মেঘনা-যমুনা" মুক্তিযুদ্ধের স্লোগানে পরিণত হয়। শামসুর রহমান তার কবিতা, সাহিত্যকর্ম, এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তিনি ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, এবং ২০০০ সালে একুশে পদক লাভ করেন। শামসুর রহমান ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বাংলাদেশের সাহিত্যের এক অমর কবি হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

মন্তব্য করুন