আসাদের শার্ট

40
0

গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের
জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট
উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায় ।

বোন তার ভায়ের অম্লান শার্টে দিয়েছে লাগিয়ে
নক্ষত্রের মতো কিছু বোতাম কখনো
হৃদয়ের সোনালী তন্তুর সূক্ষতায়
বর্ষীয়সী জননী সে-শার্ট
উঠোনের রৌদ্রে দিয়েছেন মেলে কতদিন স্নেহের বিন্যাসে ।

ডালীম গাছের মৃদু ছায়া আর রোদ্দুর- শেভিত
মায়ের উঠোন ছেড়ে এখন সে-শার্ট
শহরের প্রধান সড়কে
কারখানার চিমনি-চূড়োয়
গমগমে এভেন্যুর আনাচে কানাচে
উড়ছে, উড়ছে অবিরাম
আমাদের হৃদয়ের রৌদ্র-ঝলসিত প্রতিধ্বনিময় মাঠে,
চৈতন্যের প্রতিটি মোর্চায় ।

আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখন্ড বস্ত্র মানবিক ;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা ।

শামসুর রহমান
লিখেছেন

শামসুর রহমান

শামসুর রহমান ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি, সাংবাদিক, এবং রাজনীতিবিদ। তিনি বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে বিবেচিত। শামসুর রহমান ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি সাংবাদিক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেন। তিনি ১৯৫৫ সালে জোহরা বেগমকে বিয়ে করেন। শামসুর রহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ "দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে" ১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয়। তিনি তার জীবদ্দশায় ৪০টিরও বেশি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার কবিতায় তিনি দেশপ্রেম, মানবতাবাদ, এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের বিষয়গুলিকে তুলে ধরেছেন। শামসুর রহমান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে বিবেচিত। তিনি তার কবিতা "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো পদ্মা-মেঘনা-যমুনা" মুক্তিযুদ্ধের স্লোগানে পরিণত হয়। শামসুর রহমান তার কবিতা, সাহিত্যকর্ম, এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তিনি ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, এবং ২০০০ সালে একুশে পদক লাভ করেন। শামসুর রহমান ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বাংলাদেশের সাহিত্যের এক অমর কবি হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

মন্তব্য করুন