কলহান্তরিকা

33
0

অকারনে আজ মনটা উদাস
লাগছে না ভালো কিছু
কঠিন কোথায় ভেঙ্গে দিছি বুক জার
বলেছি কখনো এসো না সম্মুখে আর
বলতে পারিস শিলা
একই বিধাতার লীলা
অবাধ্য মন হাহাকার করে কেন ছোটে তারি পিছু।

শনশীলা মনে ছিল যে আমার দৃঢ় প্রত্যয় এই
যতই কেননা বকি অভিমান ভরে
মিটে যাবে সবি আবার একটু পরে
তখন রাগের ঝোঁকে
এসো না বলছি ওকে
ভেবেছি আবার বিকাল বেলায় নিয়মিত আসবেই।

দোষ তার নয়
আমারই তো দোষ তাই ভাবি নির্জনে
এ তেজ দর্প এই অভিমান ভার
কিসের গর্বে করি এই অহংকার
কার প্রেমে হয়ে ধনী
সবগ নগণ্য গনি?
যার গরবেতে গরবিনী আমি ব্যথা দেয়া তারি মনে।

পাষাণের চেয়ে কঠিন আমার এই নির্মম প্রাণ
তা না হলে তাকে বলতে কি করে পারি তোমার মমতা আমার অশুভকারী
চাইনেও ভালোবাসা
করো না আমার আশা
তোমার মত অযোগ্য কেউ করেনি মাল্যদান।

ছল ছল চোখ ম্লান মুখখানি নিবিড় ব্যথায় নীল
একটি কথারও দেয় নি জবাব কিছু
নীরবে ছিল বসে মাথা করে নিচু
সারাদিন কেন জানি তারই সেই ছবিখানি
ভাসছে আমার চোখের সম্মুখে নড়ছে না একতিল।

অবুঝ সে বড় বোঝেনা কিছুই সরল শিশুর চেয়ে
শিবের মতন আপনা ভুলে সে থাকে
আমি ছাড়া কেউ পারেনি চিনতে তাকে
না থাক অর্থ ধন
এত সুন্দর মন
নেইকো জগতে। ধন্য হয়েছি আমি ওর মন পেয়ে।

রাগ হয়েছিল অন্যের পরে আঘাত করেছি তাকে
সে আঘাত ব্যথা চার গুন হয়ে কি রে
নিজেরই এ বুকে এসেচে এখন ফিরে
সে যদি না আসে আর
কি হবে তবে আমার
তুই গিয়ে তাকে বলিস বুঝিয়ে যদি ব্যথা পেয়ে থাকে।

রাধারাণী দেবী
লিখেছেন

রাধারাণী দেবী

রাধারাণী দেবী বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বাঙালি কবি। ভাষার মাধুর্যে ভাবের স্নিগ্ধতায় আর ছন্দের সাবলীল দক্ষতায় 'অপরাজিতা দেবী' ছদ্মনামে সাহিত্য জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী মহিলা কবি।

রাধারাণী দেবী ১৩ নভেম্বর, ১৯০৩ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের কর্মী ও মাতা ছিলেন গৃহিণী। রাধারাণী দেবীর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বাড়িতে। পরে তিনি কলকাতার বেথুন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং বেথুন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।

রাধারাণী দেবীর লেখা প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯১৩ সালে 'মানসী' পত্রিকায়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অপরাজিতা' প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালে। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:

* 'সুন্দর ও ভালোবাসা' (১৯২৬)
* 'হৃদয়ের কথা' (১৯২৯)
* 'প্রকৃতির কথা' (১৯৩২)
* 'সত্য ও সুন্দর' (১৯৩৫)
* 'জীবন ও মৃত্যু' (১৯৪২)
* 'অঞ্জলি' (১৯৪৭)
* 'আলো ও অন্ধকার' (১৯৫০)
* 'মন ও জীবন' (১৯৫২)

রাধারাণী দেবীর কবিতাগুলির মধ্যে প্রেম, প্রকৃতি, দেশপ্রেম, মানবতাবাদ ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। তার কবিতাগুলির ভাষা ও ছন্দ অত্যন্ত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। তিনি বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে এক অনন্য স্থান দখল করে আছেন।

রাধারাণী দেবীর সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি ১৯৬৪ সালে সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার, ১৯৬৮ সালে পদ্মভূষণ, ১৯৭৩ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার এবং ১৯৮২ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

রাধারাণী দেবী ১৯৮৯ সালের ৩০ নভেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য জগত এক অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

রাধারাণী দেবীর কবিতার কিছু বিখ্যাত লাইন:

* "প্রিয়তম, আমি তোমার অপেক্ষায় বসে আছি,
* যেন প্রদীপের শিখায় বসে থাকে মশা।"
* "আমার ভালোবাসা তোমার জন্য,
* আমার গান তোমার জন্য।"
* "হে প্রকৃতি, তুমি আমার মা,
* তোমার কোলে আমি সুখী।"
* "হে দেশ, তোমার জন্য আমার জীবন,
* তোমার জন্য আমার মৃত্যু।"

রাধারাণী দেবীর কবিতাগুলি আজও পাঠকদের মন ছুঁয়ে যায়। তার কবিতাগুলি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।

মন্তব্য করুন