অনাগত

44
0

ভাবতে ভালো লাগে
আসবে-আসবেই সে অনাগত কাল
যেদিন মানব সভ্যতা মুক্ত হবে এই
ক্রুর কপটতা, প্রবল লোভ আর
নীচ স্বার্থবুদ্ধির নাগপাশ হতে।

আাসবেই সে যুগ-সে যুগে স্বতঃই স্বীকৃত হবে
বিধাতার বিশ্বে প্রত্যেক মানুষই
পূর্ণোদর আহারের অধিকারী।
বিশজনের ক্ষুধার অন্ন একজন লুটে নিয়ে
পারবে না এমন অযথা অপচয় করতে
ধনীকের বিলাস প্রাসাদ দুয়ারে
শত শত মানব সন্তান
প্রার্থীর বেশে আসবে না আর-প্রসাদ প্রত্যাশী হয়ে।
দেখা যাবে না মহানগরীর পথে পথে
পয়ঃপ্রণালীর উচ্ছিষ্ট অন্ন নিয়ে
কুকুরের সাথে মানুষের কাড়াকাড়ি
ভাবতে ভালো লাগে
আসবে-আসবেই সে অনাগত দিন
যেদিন লুপ্ত হয়ে যাবে ক্ষমতাশালীর
ক্ষমতা অপব্যবহারের কু অধিকার
মাত্র শক্তি ন্যূনতার ক্রুটীতে
নিরপরাধ মানব জাতি
হবে না আর প্রবলের দ্বারা অবমানিত উৎপীড়িত
বৈষম্যের বিষম উৎপাত অন্তর্হিত হবে
মানুষের আপন হাতে গড়া সমাজ বিধি হতে।
বর্তমান যুগ দেবতা নিয়ে এসেছেন কি তারই আশ্বাস?
সেই বঞ্চিত অনাগতের আবির্ভাব সম্ভাবনাতেই
আজকের ধরিত্রী কি বেদনা মূমুর্ষু?
যার ধ্যানে এবং ধারণায় গৌতম শাক্যসিংহ
হয়েছিলেন রূপান্তরিত অমিতাভ বুদ্ধে
আজও জন্মায় নি যে মহত্তর বৃত্তিশালী মানব শ্রেণি
এখনও আসে নি সত্যকার অকৃত্রিম সভ্যতা
স্বপ্ন কল্পনায়ও যা আজকের এই
হিংস্র পৃথিবীর অতি অসম্ভব
স্থিতধী ঋষি যারা, দৃষ্টি যাদের সুদূর প্রসারী
তারা পেয়েছেন কি এই নবযুগের আভাস?

ঐকান্তিক বিশ্বাসে ভাবতে ভালো লাগে
মহাকালের মহানচক্রে আসবে-
আসবেই সে অনাগত
আজকের আগতের যা সম্পূর্ণ বিপরীত
সুতরাং অপূর্ব এবং অভিনব
যা কখনোই আসে নি এই পৃথিবীর বুকে
যা সত্য হয়ে ওঠেনি মানব সভ্যতায়
আজও সার্থক হয়নি যা বহু সাধকের আমরণ সাধনায়
সেই অনাগত নবমনোবৃত্তিশালী
উন্নত মনুষ্যজাতির
অকৃত্রিম শুভ সভ্যতার অভ্যূদয়ে
নবজন্ম পরিগ্রহ করুক এই
জীর্ণ প্রাচীন পৃথিবী ।।

রাধারাণী দেবী
লিখেছেন

রাধারাণী দেবী

রাধারাণী দেবী বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বাঙালি কবি। ভাষার মাধুর্যে ভাবের স্নিগ্ধতায় আর ছন্দের সাবলীল দক্ষতায় 'অপরাজিতা দেবী' ছদ্মনামে সাহিত্য জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী মহিলা কবি।

রাধারাণী দেবী ১৩ নভেম্বর, ১৯০৩ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের কর্মী ও মাতা ছিলেন গৃহিণী। রাধারাণী দেবীর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বাড়িতে। পরে তিনি কলকাতার বেথুন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং বেথুন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।

রাধারাণী দেবীর লেখা প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯১৩ সালে 'মানসী' পত্রিকায়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অপরাজিতা' প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালে। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:

* 'সুন্দর ও ভালোবাসা' (১৯২৬)
* 'হৃদয়ের কথা' (১৯২৯)
* 'প্রকৃতির কথা' (১৯৩২)
* 'সত্য ও সুন্দর' (১৯৩৫)
* 'জীবন ও মৃত্যু' (১৯৪২)
* 'অঞ্জলি' (১৯৪৭)
* 'আলো ও অন্ধকার' (১৯৫০)
* 'মন ও জীবন' (১৯৫২)

রাধারাণী দেবীর কবিতাগুলির মধ্যে প্রেম, প্রকৃতি, দেশপ্রেম, মানবতাবাদ ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। তার কবিতাগুলির ভাষা ও ছন্দ অত্যন্ত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। তিনি বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে এক অনন্য স্থান দখল করে আছেন।

রাধারাণী দেবীর সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি ১৯৬৪ সালে সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার, ১৯৬৮ সালে পদ্মভূষণ, ১৯৭৩ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার এবং ১৯৮২ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

রাধারাণী দেবী ১৯৮৯ সালের ৩০ নভেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য জগত এক অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

রাধারাণী দেবীর কবিতার কিছু বিখ্যাত লাইন:

* "প্রিয়তম, আমি তোমার অপেক্ষায় বসে আছি,
* যেন প্রদীপের শিখায় বসে থাকে মশা।"
* "আমার ভালোবাসা তোমার জন্য,
* আমার গান তোমার জন্য।"
* "হে প্রকৃতি, তুমি আমার মা,
* তোমার কোলে আমি সুখী।"
* "হে দেশ, তোমার জন্য আমার জীবন,
* তোমার জন্য আমার মৃত্যু।"

রাধারাণী দেবীর কবিতাগুলি আজও পাঠকদের মন ছুঁয়ে যায়। তার কবিতাগুলি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।

মন্তব্য করুন