সায়ংকাল

64
0

চেয়ে দেখ, চলিছেন মৃদে অস্তাচলে
দিনেশ, ছড়ায়ে স্বর্ণ, রত্ন রাশি রাশি
আকাশে। কত বা যত্নে কাদম্বিনী আসি
ধরিতেছে তা সবারে সুনীল আঁচলে! –
কে না জানে অলঙ্কারে অঙ্গনা বিলাসী?
অতি-ত্বরা গড়ি ধনী দৈব-মায়া-বলে
বহুবিধ অলঙ্কার পরিবে লো হাসি,—
কনক-কঙ্কণ হাতে, স্বর্ণ-মালা গলে!
সাজাইবে গজ, বাজী; পৰ্ব্বতের শিরে
সুবর্ণ কিরীট দিবে; বহাবে অম্বরে
নদস্রোতঃ, উজ্জ্বলিত স্বর্ণবর্ণ নীরে!
সুবর্ণের গাছ রোপি, শাখার উপরে
হেমাঙ্গ বিহঙ্গ থোবে। –এ বাজী করি রে
শুভ ক্ষণে দিনকর কর-দান করে।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত
লিখেছেন

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩) ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি এবং নাট্যকার ও প্রহসন রচয়িতা। তাকে বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব গণ্য করা হয়। ঐতিহ্যের অনুবর্তিতা অমান্য করে নব্যরীতি প্রবর্তনের কারণে তাকে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী কবি হিসেবেও অভিহিত করা হয়।

মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে। তার পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন একজন বিশিষ্ট আইনজীবী এবং মাতা জাহ্নবী দেবী ছিলেন একজন সুশিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনস্ক মহিলা।

মধুসূদন দত্তের শিক্ষাজীবন শুরু হয় সাগরদাঁড়ি পাঠশালায়। পরে তিনি কলকাতার খিদিরপুর স্কুল এবং হিন্দু কলেজে পড়াশোনা করেন। হিন্দু কলেজে পড়াকালীন তিনি ইংরেজি সাহিত্যে আগ্রহী হন এবং ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনা শুরু করেন।

১৮৪৩ সালে মধুসূদন দত্ত খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং মাইকেল নাম গ্রহণ করেন। খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের পর তিনি পাশ্চাত্য সাহিত্যের প্রতি আরও বেশি আকৃষ্ট হন এবং বাংলা সাহিত্যে পাশ্চাত্য রীতিনীতির প্রবর্তন করেন।

মধুসূদন দত্তের সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে:

* **কবিতা:** "সনেট", "মধুসূদন চরিত", "বীরাঙ্গনা", "চতুর্দশপদী কবিতা"
* **নাটক:** "শর্মিষ্ঠা", "কালিদাস", "মেঘনাদবধ কাব্য", "কৃষ্ণকুমারী", "রুদ্রমহিষ"
* **প্রহসন:** "বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ", "পদ্মাবতী"

মধুসূদন দত্তের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। তিনি বাংলা সাহিত্যে সনেট, অমিত্রাক্ষর ছন্দ, এবং নাট্যকারের ভূমিকা প্রবর্তন করেন। তার সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্যকে আধুনিকতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যান।

মধুসূদন দত্তের সাহিত্যকর্মের কিছু উল্লেখযোগ্য অবদান নিম্নরূপ:

* তিনি বাংলা সাহিত্যে সনেট, অমিত্রাক্ষর ছন্দ, এবং নাট্যকারের ভূমিকা প্রবর্তন করেন।
* তিনি বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতাবাদের প্রবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
* তিনি বাংলা সাহিত্যে নারীবাদের ধারণা প্রবর্তন করেন।

মধুসূদন দত্ত একজন প্রতিভাবান কবি, নাট্যকার, এবং প্রহসন রচয়িতা ছিলেন। তার সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

মন্তব্য করুন