ধরায় দেবতা চাহি

30
0

ত্রিদিবে দেবতা নাও যদি থাকে ধরায় দেবতা চাহি গো চাহি,
মানব সবাই নয় গো মানব, কেহ বা দৈত্য, কেহ বা দানব,
উত্পীড়ন করে দুর্বল নরে, তাদের তরে যে ভরসা নাহি—
ধরায় দেবের প্রতিষ্ঠা চাহি ||
সেকালে দেবতা গোলক তেয়াগি, মাটির ধরায় মরের গেহে,
লইত জনম নর-শিশুরূপে, বাড়িয়া উঠিত নারীর স্নেহে ;
ধূলা বালু লয়ে খেলিয়া বেড়াত আর দশজন শিশুর মত ;—
আসিলে সময় দৈব বলে বলী, দানবে দলিতে যাইত সে চলি,
হেলায় সংহারি দুরাচারগণে, নিরাতঙ্ক করি সাধুসজ্জনে,
ফিরিয়া আসিত অপরাহত ||
ত্রিদিব তেয়াগি আসে কি না আসে, নরের আলয়ে নারীর কোলে,
আজিও দেবতা নর-জন্ম লয়, ধরণীর গ্লানি ম্লানি করি ক্ষয়,
আলোকের দিকে টানিয়া তোলে ||

ঐশ্বর্য আরাম চাহে ভুলাইতে, স্নেহ প্রেম কত বাঁধিতে চায়,
মাতা কাঁদে, জায়া শিশু দেয় কোলে সকল বাঁধন কাটিয়া যায় |
বাহিরে বাতাসে যেই আর্তনাদ, যে রোদন ধ্বনি বহিয়া যায়,
শুনিতে শুনিতে অভ্যাসবশে সকলে যাহা না শুনিতে পায়—
তাই ডেকে লয় নর-দেবতায় সংগ্রামে পশিতে দানব সাথে,
দানব-সংহার মানবেরি কাজ, দধীচির হাড় ইন্দ্রের হাতে
বজ্র হয়ে আছে, রবে চিরদিন, মানবেরে দিয়া দেবের জয়,
ত্রিদিবে দেবতা নাও যদি থাকে ধরায় দেবতা নহিলে নয় ||

কামিনী রায়
লিখেছেন

কামিনী রায়

কামিনী রায় একজন প্রথিতযশা বাঙালি মহিলা কবি, সমাজকর্মী এবং নারীবাদী লেখিকা। তিনি ব্রিটিশ ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক ছিলেন। তার জন্ম ১৮৬৪ সালের ১২ অক্টোবর বাকেরগঞ্জের বাসন্ডা গ্রামে। তার বাবা চণ্ডীচরণ সেন ছিলেন একজন ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখক ও পেশায় বিচারক।

কামিনী রায় মাত্র আট বছর বয়স থেকে কবিতা লেখা শুরু করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "আলো ও ছায়া" প্রকাশিত হয় ১৮৮৯ সালে। এরপর তিনি আরও বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল "নির্মালী" (১৮৯১), "পৌরাণিকী" (১৮৯৭), "গুঞ্জন" (১৯০৫), "মাল্য ও নির্মাল্য" (১৯১৩), "অশোকসঙ্গীত" (১৯১৪), "অম্বা" (১৯১৫), "বালিকা শিক্ষার আদর্শ" (১৯১৮), "ঠাকুরমার চিঠি" (১৯২৪), "দীপ ও ধূপ" (১৯২৯), "জীবনপথে" (১৯৩০)।

কামিনী রায়ের কবিতাগুলি প্রকৃতি, প্রেম, মানবতা ও নারী অধিকারের বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করে রচিত। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাবাধীন হলেও তার কবিতায় নিজস্ব স্বতন্ত্রতা লক্ষ্য করা যায়। তার কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য, নারীর প্রেম ও ভালোবাসা, মানবতার মর্যাদা ও নারীর অধিকারের দাবি উঠে এসেছে।

কামিনী রায় নারীশিক্ষার একজন প্রবক্তা ছিলেন। তিনি নারীদের শিক্ষা ও কর্মজীবনে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতেন। তিনি নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যও আন্দোলন করেছিলেন।

কামিনী রায় ১৯৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হাজারিবাগ জেলায় মৃত্যুবরণ করেন।

কামিনী রায়ের অবদানের জন্য তিনি বাংলা সাহিত্যে এক অমর স্থান অধিকার করে আছেন। তিনি একজন প্রকৃত প্রতিভাসম্পন্ন কবি, সমাজকর্মী ও নারীবাদী লেখিকা হিসেবে পরিচিত।

মন্তব্য করুন