সাহিত্য রস

সবচেয়ে বড় কবিতা, গল্প, ছন্দ এবং গান প্রকাশের ওয়েবসাইট

সুখ

1
0

নাই কিরে সুখ? নাই কিরে সুখ?—
এ ধরা কি শুধু বিষাদময়?
যতনে জ্বলিয়া কাঁদিয়া মরিতে
কেবলি কি নর জনম লয়?—
কাঁদাইতে শুধু বিশ্বরচয়িতা
সৃজেন কি নরে এমন করে’?
মায়ার ছলনে উঠিতে পড়িতে
মানবজীবন অবনী ‘পরে?
বল্ ছিন্ন বীণে, বল উচ্চৈঃস্বরে,—
না,—না,—না,—মানবের তরে
আছে উচ্চ লক্ষ্য, সুখ উচ্চতর,
না সৃজিলা বিধি কাঁদাতে নরে।
কার্যক্ষেত্র ওই প্রশস্ত পড়িয়া,
সমর-অঙ্গন সংসার এই,
যাও বীরবেশে কর গিয়ে রণ ;
যে জিনিবে সুখ লভিবে সেই।
পরের কারণে স্বার্থে দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে?
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।
পরের কারণে মরণের সুখ ;
“সুখ” “সুখ” করি কেঁদনা আর,
যতই কাঁদিবে ততই ভাবিবে,
ততই বাড়িবে হৃদয়-ভার।
গেছে যাক ভেঙ্গে সুখের স্বপন
স্বপন অমন ভেঙ্গেই থাকে,
গেছে যাক্ নিবে আলেয়ার আলো
গৃহে এস আর ঘুর’না পাকে।
যাতনা যাতনা কিসেরি যাতনা?
বিষাদ এতই কিসের তরে?
যদিই বা থাকে, যখন তখন
কি কাজ জানায়ে জগৎ ভ’রে?
লুকান বিষাদ আঁধার আমায়
মৃদুভাতি স্নিগ্ধ তারার মত,
সারাটি রজনী নীরবে নীরবে
ঢালে সুমধুর আলোক কত!
লুকান বিষাদ মানব-হৃদয়ে
গম্ভীর নৈশীথ শান্তির প্রায়,
দুরাশার ভেরী, নৈরাশ চীত্কার,
আকাঙ্ক্ষার রব ভাঙ্গে না তায়।
বিষাদ—বিষাদ—বিষাদ বলিয়ে
কেনই কাঁদিবে জীবন ভরে’?
মানবের মন এত কি অসার?
এতই সহজে নুইয়া পড়ে?
সকলের মুখ হাসি-ভরা দেখে
পারনা মুছিতে নয়ন-ধার?
পরহিত-ব্রতে পারনা রাখিতে
চাপিয়া আপন বিষাদ-ভার?
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী ‘পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা,
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।

কামিনী রায়
WRITTEN BY

কামিনী রায়

কামিনী রায় একজন প্রথিতযশা বাঙালি মহিলা কবি, সমাজকর্মী এবং নারীবাদী লেখিকা। তিনি ব্রিটিশ ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক ছিলেন। তার জন্ম ১৮৬৪ সালের ১২ অক্টোবর বাকেরগঞ্জের বাসন্ডা গ্রামে। তার বাবা চণ্ডীচরণ সেন ছিলেন একজন ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখক ও পেশায় বিচারক।

কামিনী রায় মাত্র আট বছর বয়স থেকে কবিতা লেখা শুরু করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "আলো ও ছায়া" প্রকাশিত হয় ১৮৮৯ সালে। এরপর তিনি আরও বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল "নির্মালী" (১৮৯১), "পৌরাণিকী" (১৮৯৭), "গুঞ্জন" (১৯০৫), "মাল্য ও নির্মাল্য" (১৯১৩), "অশোকসঙ্গীত" (১৯১৪), "অম্বা" (১৯১৫), "বালিকা শিক্ষার আদর্শ" (১৯১৮), "ঠাকুরমার চিঠি" (১৯২৪), "দীপ ও ধূপ" (১৯২৯), "জীবনপথে" (১৯৩০)।

কামিনী রায়ের কবিতাগুলি প্রকৃতি, প্রেম, মানবতা ও নারী অধিকারের বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করে রচিত। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাবাধীন হলেও তার কবিতায় নিজস্ব স্বতন্ত্রতা লক্ষ্য করা যায়। তার কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য, নারীর প্রেম ও ভালোবাসা, মানবতার মর্যাদা ও নারীর অধিকারের দাবি উঠে এসেছে।

কামিনী রায় নারীশিক্ষার একজন প্রবক্তা ছিলেন। তিনি নারীদের শিক্ষা ও কর্মজীবনে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতেন। তিনি নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যও আন্দোলন করেছিলেন।

কামিনী রায় ১৯৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হাজারিবাগ জেলায় মৃত্যুবরণ করেন।

কামিনী রায়ের অবদানের জন্য তিনি বাংলা সাহিত্যে এক অমর স্থান অধিকার করে আছেন। তিনি একজন প্রকৃত প্রতিভাসম্পন্ন কবি, সমাজকর্মী ও নারীবাদী লেখিকা হিসেবে পরিচিত।

মন্তব্য করুন