সার্থক রজনী

1
0

আজকে রাতরে যাইতে দেব না, শুধু শুধু কথা কয়ে,
তারা ফুটাইব, হাসি ছড়াইব আঁধারের লোকালয়ে।
গোলাপী ঠোঁটের কৌটায় করে রাখিব রাতেরে ভরি,
তোমার দু-খানি রঙিন বাহুর বাঁধনে তাহারে ধরি।
আজকের রাত শুধু আজকের-যত ভাল ভাল কথা,
কয়ে আর কয়ে ফুটাইব তাতে যত স্বপনের লতা!

আজকের রাত, মেরু কুহেলির এক ফোঁটা সরু চাঁদ,
আজের রাত-শত নিরাশার একটি পূরিত সাধ।
আজের রাতেরে জড়ায়ে রাখিব তোমার সোনার গায়,
আজকের রাতেরে দোলায় দোলাব তবনিশ্বাস বায়।

আজকের রাতে কথা কব আমি-যত ভাল ভাল কথা,
কথার ফুলেতে সাজাইয়া দেব তোমার দেহের লতা!
কথায় কথায় উড়ে যাব আমি, ছড়াইয়া যাব আর,
মরে যাব আমি নিঃশেষ হয়ে বিস্মৃতি পারাবার।

দিবসে যা হয় হইবে তখন, রাতের পেয়ালা ভরি,
দেহ-মদিরার সোনালী পানীয় উথলি যাইবে পড়ি।
আজকের রাতে বল, ভালবাসি বল বল তুমি মোর,
না হয় ভুলিও যখন হইবে তোমার রজনী ভোর-
আমার রজনী ভোর হবেনাক, এ রাত জহর-জাম,
পান করে আমি শেষ-নাহি-হওয়া নিদ্রা যে লভিলাম।

জসীম উদ্দিন
WRITTEN BY

জসীম উদ্দিন

জসীম উদ্‌দীন (১ জানুয়ারি ১৯০৩ - ১৩ মার্চ ১৯৭৬) একজন বাঙালি কবি, গীতিকার, ঔপন্যাসিক ও লেখক। তিনি আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে লালিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ আধুনিক কবি। ঐতিহ্যবাহী বাংলা কবিতার মূল ধারাটিকে নগর সভায় নিয়ে আসার কৃতিত্ব জসীম উদ্‌দীনের।

জসীম উদ্‌দীন ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আনসার উদ্দিন মোল্লা ছিলেন একজন শিক্ষক এবং মা আমিনা খাতুন ছিলেন একজন গৃহিণী।

জসীম উদ্‌দীন ১৯১৮ সালে মধুখালী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা এবং ১৯২২ সালে ফরিদপুর কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, কিন্তু অর্থাভাবে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি।

জসীম উদ্‌দীন ১৯২৭ সালে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ১৯২৭ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত ফরিদপুর জেলার তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং ১৯৩১ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত ফরিদপুর কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯৩৩ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৬২ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

জসীম উদ্‌দীনের সাহিত্যজীবন শুরু হয় ১৯২২ সালে। তার প্রথম প্রকাশিত কবিতা ছিল "প্রভাত"। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল:

সোনার তরী
নদীর স্বপ্ন
গাঁয়ের মেয়ে
ঘুমের দেশে
ধানক্ষেত
ধানসিঁড়ি
নদীর পৃষ্ঠে
মেঘের মেয়ে
ঝড়
জসীম উদ্‌দীনের কবিতাগুলি আবহমান বাংলার গ্রামীণ জীবনের চিত্র তুলে ধরে। তার কবিতাগুলিতে তিনি গ্রামীণ মানুষের সুখ-দুঃখ, ভালোবাসা, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও সংগ্রামের কথা ফুটিয়ে তুলেছেন।

জসীম উদ্‌দীন একজন সফল গীতিকারও ছিলেন। তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় গান রচনা করেছেন। তার রচিত উল্লেখযোগ্য গানগুলি হল:

সোনার তরী
ধানসিঁড়ি
ঘুমের দেশে
ধানক্ষেত
নদীর পৃষ্ঠে
মেঘের মেয়ে
ঝড়
ওরা বলে চাষার দুলাল
মাগো আমার মুখের চামড়া কালো
জসীম উদ্‌দীনের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র।

জসীম উদ্‌দীনের সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তিনি প্রেসিডেন্টের প্রাইড অব পারফরমেন্স পুরস্কার (১৯৫৮), বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক (১৯৭৬) ও স্বাধীনতা পুরস্কারে (মরণোত্তর, ১৯৭৮) ভূষিত হন।

জসীম উদ্‌দীন ১৯৭৬ সালের ১৩ মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

মন্তব্য করুন