তার মৃত্যু

87
0

ইজদানি মারা গেছে বিমান-পতনে ।
স্পর্ধা ছিল পৃথিবীকে মুঠো করে ধরে
নরোম সুগোল এক কমলালেবুর মতো।

মাথা ভরা ছিল তার বইয়ের মলাট, টাই, নাম
আর নকটান ভিউ, সম্ভবতঃ আলো ছিল
গজ দুই নাইলন সুতো;
মারা গেল অল্প বয়সেই
অনেক ওপর থেকে নানা চাপ হাওয়া সাঁতারিয়ে।

তোমরা এখনো যারা যাবে কোনো চায়ের বিকেলে
সদাশয়া মহিলার কাছে;
-একদিন সমবেত শোক করা গেছে-
আজকে আসেনি ওরা?
চায়ে চিনি নেই?

কথা আর হাওয়া এই-
র‌্যাবো কি মাতাল কোনো কিশোর লেখক?
যাই বলো ক কতো সে বড্ড বেয়াড়া।
-জেনে রেখো, ইজাদানি সুক্ষ্ম দেহে পেছনেই আছে॥

সৈয়দ শামসুল হক
লিখেছেন

সৈয়দ শামসুল হক

সৈয়দ শামসুল হক ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী সাহিত্যিক। তাকে "সব্যসাচী লেখক" বলা হয় কারণ তিনি কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, অনুবাদ তথা সাহিত্যের সকল শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্য পরিচিত ছিলেন।

তিনি ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

তার সাহিত্যিক জীবন ১৯৫১ সালে ফজলে লোহানী সম্পাদিত 'অগত্যা' পত্রিকায় একটি গল্প প্রকাশের মাধ্যমে শুরু হয়। এরপর তিনি অসংখ্য কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প এবং অনুবাদ রচনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য রচনাগুলির মধ্যে রয়েছে:

* **কবিতা:** বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা, নদীর কাছে, নীল আকাশের কাছে, অচেনা
* **উপন্যাস:** খেলারাম খেলে যা, তিন পয়সার জ্যোছনা, জলেশ্বরী, অদৃশ্য বস্তু
* **নাটক:** সাতটি নাটক, হডসনের বন্দুক, হ্যামলেট
* **গল্প:** শ্রেষ্ঠ গল্প, অচেনা, নীল আকাশের কাছে
* **অনুবাদ:** ওথেলো, হ্যামলেট, ম্যাকবেথ, রিচার্ড III

তার সাহিত্যকর্মে তিনি বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের আবেগ-অনুভূতি-বিকার সবই খুব সহজ কথা ও ছন্দে উঠে এসেছে। তিনি বাঙালি সাহিত্যে আধুনিকতার অন্যতম পথিকৃত।

সৈয়দ শামসুল হক ১৯৬৬ সালে মাত্র ৩১ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একুশে পদক, ২০০৫ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার এবং ২০০৭ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।

তিনি ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

মন্তব্য করুন