মাছ মজলিশ

108
0

তীক্ষ্ণ তলোয়ারের মতো চিতল মাছের পেট ।
তাই দেখে রুই মাছের হলো আস্ত মুড়ো হেঁট ।
অধিক তাকে আঘাত করে বোয়াল তদ্দণ্ড ।
মুড়ােও যাবে ! মুগের ডালে রাঁধবে মুড়িঘন্ট !
শুনেই শোলের ভয় ধরে যায়, ডুব দেয় সে জলে ।
জলের বুকে বুগবুগি দেয় খলসেটা খলবলে ।
ট্যাংড়া বলে টেরটা পাবি রাঁধলেই চচ্চড়ি ।
খলসে পুঁটি বাঙালিদের পছন্দ সম্বচ্ছরই ।
জড়াও কেন আমাকে ভাই ? পুঁটি চমকে ওঠে ।
দাঁড়া এবং ঝুঁটি সমেত চিংড়িগুলো ছোটে ।
মাছের বংশে জন্ম তো নয়, নাম জুটেছে মাছ ।
চিংড়ি বলা মাত্র কন্যা উনোনে দেয় আঁচ ।
ইলিশ বলে আমার কোনো মন্তব্যই নাই ।
আগুন পানি একই কথা__ বরফ চালান যাই ।
মৃগেল নদীর মৃদঙ্গে দেয় ল্যাজের জোরে ঘা ।
হেঁটে উঠছে কৈ শিঙ্গি, জ্যান্ত ধরে খা ।।

সৈয়দ শামসুল হক
লিখেছেন

সৈয়দ শামসুল হক

সৈয়দ শামসুল হক ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী সাহিত্যিক। তাকে "সব্যসাচী লেখক" বলা হয় কারণ তিনি কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, অনুবাদ তথা সাহিত্যের সকল শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্য পরিচিত ছিলেন।

তিনি ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

তার সাহিত্যিক জীবন ১৯৫১ সালে ফজলে লোহানী সম্পাদিত 'অগত্যা' পত্রিকায় একটি গল্প প্রকাশের মাধ্যমে শুরু হয়। এরপর তিনি অসংখ্য কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প এবং অনুবাদ রচনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য রচনাগুলির মধ্যে রয়েছে:

* **কবিতা:** বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা, নদীর কাছে, নীল আকাশের কাছে, অচেনা
* **উপন্যাস:** খেলারাম খেলে যা, তিন পয়সার জ্যোছনা, জলেশ্বরী, অদৃশ্য বস্তু
* **নাটক:** সাতটি নাটক, হডসনের বন্দুক, হ্যামলেট
* **গল্প:** শ্রেষ্ঠ গল্প, অচেনা, নীল আকাশের কাছে
* **অনুবাদ:** ওথেলো, হ্যামলেট, ম্যাকবেথ, রিচার্ড III

তার সাহিত্যকর্মে তিনি বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের আবেগ-অনুভূতি-বিকার সবই খুব সহজ কথা ও ছন্দে উঠে এসেছে। তিনি বাঙালি সাহিত্যে আধুনিকতার অন্যতম পথিকৃত।

সৈয়দ শামসুল হক ১৯৬৬ সালে মাত্র ৩১ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একুশে পদক, ২০০৫ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার এবং ২০০৭ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।

তিনি ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

মন্তব্য করুন