সাহিত্য রস

সবচেয়ে বড় কবিতা, গল্প, ছন্দ এবং গান প্রকাশের ওয়েবসাইট

অনর্থক নয়

1
0

বেয়ারা পাঠিয়ে কারা টাকা তোলে ব্যাঙ্ক থেকে?
আমি তো নিজের সইটা এখনো চিনি না
বিষম টাকার অভাব! নেই। শুধু হৃৎপিন্ড হাওয়া টেনে নিয়ে
হাসি কুলকুচো করি। মাথায় মুকুট নেই বলে
কেউ ধার দিতেও চায় না।
কিছু টাকা জমা আছে ব্লাড ব্যাঙ্কে। সামান্য।
কাঁটা ছাড়ানো মাছের মতন
গদ্য লিখলে ক্যাশ আসে। পারি না। কবিতায় দশ টাকা
তাই বা মন্দ কি, কত দীর্ঘ দিন বন্ধুদের টেবিলে বসিনি।
কতই তো দিলে বিধি- চোখ, নাক, হাত, গ্রীবা, জিভ, ঘোরাঘুরি
কয়েকখানা বড় সাইজ উপন্যাস শেষ করার সামর্থ দিলে না?
শিল্পের জননী নাকি দুঃখ? সর্বনাশ, আমার তো কোনো দুঃখ নেই।
খুব গোপনে জানাচ্ছি
(একমাত্র টাকা কিংবা দুঃখ না-থাকার-দুঃখ যদি গণ্য হয়!)
কে কোথায় পায়নি প্রেম, এর সঙ্গী ভোগ করছে ওর সন্ধ্যেবেলা
এসব চমৎকার লাগে।

কে যেন আমায় কথা দিয়েছিল! কথা সাঁতরে গেছে অন্ধকারে-
ভয়ঙ্কর জানলা খুলে রাত দুটোয় এক ঝলক আলো এসে পড়ে
মাঝে মাঝে চোখে মুখে। অমনি চেঁচিয়ে উঠি উল্লাসে মুখ তুলেঃ
বিশ্বাসঘাতিনী ভাগ্যে হয়েছিলে নারী, তাই বেঁচে থাকা এত রোমাঞ্চের
নেশাফেশা কিছু নেই, দুঃখ নেই, গোপনে চুপচাপ বাঁচতে চাই
তাও কত শক্ত দেখেছি, চারবেলা অদ্ভুত চাকরি, ঘুমহীন চোখে
কবিতার আরাধনা
কেন এই আরাধনা? ওভারটাইম দশ টাকা?

ছোট ছোট ঝাল লঙ্কা কিংবা ঠিক টিনের চিরুনির মতো রোদে
পঞ্চাশটা কাবুলিকে স্বপ্ন দেখে আজ দুপুরে চমকে গেছি ট্রামে।
কোর্বন স্ট্রীটের মোড়ে বুড়ো দরবেশ চাইলো অমরত্ব খুবই আন্তরিক
কপালে কুষ্ঠের কাদা। তিনটে নয়া পয়সা দিয়ে মানুষের মতো অভিমান
সংকেতবিহীন কন্ঠে জানালুমঃ
যদি রাস্তা চিনতে পারো, যাও হে অনন্তধামে সন্ধের আগেই
ঈশ্বরের পাশে একটি তোমার জন্যেই খালি আসন রয়েছে আমি জানি
পরমহূর্তেই আমি পাশের পাগলীর কাছে হাত পেতে দাঁড়িয়ে-
তিনটে পয়সা দাও ভাই আজ আমাকে
গাড়ি ভাড়া নেই বহুদূরে যেতে হবে।

মায়ের তোরঙ্গ থেকে সিঁদুরের গুড়ো ঝেড়ে আজও
সম্রাট পঞ্চম জর্জ কাটামুন্ডে সহাস্য বয়ান
যাও মাছের বাজারে ইয়োর ম্যাজিস্টি , পুঁইশাক, সিগারেট, কুমড়োয়
দেখি কতো তোমার মুরোদ! সব ম্যাজিক ভুলে গেছি-
একত্রিশ তারিখে দেখছি অ্যালয়ের কুশব্দ ইয়ার্কি
এখানে ওখানে নদী- কালো জল, প্রত্যহ স্নান সেরে বহু পবিত্র গন্ডার
চৌরঙ্গীর চতুর্দিকে হুটোপুটি করে- হাসে, মেয়েদের খোলা তলপেটে
সুড়সুড়ি দেয় কিংবা ঠোঁট চাটে, নুন ঝাল মিশিয়ে
প্রথম শীতের এই মনোরম সন্ধ্যাগুলি কাঁটা চামচে দিয়ে ছিঁড়ে ছিঁড়ে
সুস্বাদে চিবিয়ে খায়। সমস্ত রাস্তাই আজ ভিড়ে ভর্তি ভিড়ে
ভর্তি, অসম্ভব, আমি হঠাৎ কোথায় আজ হারালুম আমার নিজস্ব
গোপন প্রস্থান পথ- এ দুর্দিনে ফটকার বাজারে!

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
WRITTEN BY

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ - ২৩ অক্টোবর ২০১২) একজন প্রখ্যাত বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক, অনুবাদক, এবং সাংবাদিক। তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর জেলায়। তাঁর পিতা ছিলেন কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক কালীপদ গঙ্গোপাধ্যায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পড়াশোনা কলকাতায়। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাহিত্যিক জীবন শুরু হয় কবিতার মাধ্যমে। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ "স্মৃতিস্তম্ভ" প্রকাশিত হয় ১৯৫২ সালে। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল:

* "অর্জুন" (১৯৫৪)
* "প্রথম আলো" (১৯৫৬)
* "সেই সময়" (১৯৬৩)
* "পূর্ব-পশ্চিম" (১৯৭১)
* "আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি" (১৯৭৭)
* "ভানু ও রাণু" (১৯৮২)
* "অন্ধকারের আলো" (১৯৯৭)

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাগুলি আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাঁর কবিতাগুলি সাধারণ মানুষের জীবন, প্রেম, ভালোবাসা, প্রকৃতি, দেশপ্রেম, ও সমাজ বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটায়। তাঁর কবিতার ভাষা ছিল সরল ও সহজবোধ্য।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একজন সফল ঔপন্যাসিকও ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হল:

* "হঠাৎ নীরার জন্য" (১৯৬৩)
* "শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা" (১৯৬৬)
* "অর্ধেক জীবন" (১৯৭৩)
* "অরণ্যের দিনরাত্রি" (১৯৭৬)
* "কাকাবাবু" (১৯৮১)
* "মনের মানুষ" (১৯৮৬)
* "আয়নায় মুখ" (১৯৯০)

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছোটগল্পকার হিসেবেও সফল ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছোটগল্পগুলির সংকলনগুলি হল:

* "এখনও দুপুর" (১৯৬৮)
* "আমার ছেলেবেলা" (১৯৭২)
* "রূপসী বাংলা" (১৯৭৫)
* "আমার সময়" (১৯৮০)
* "ছোটগল্পসমগ্র" (১৯৯৩)

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একজন প্রগতিশীল চিন্তাবিদ ছিলেন। তিনি তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে সমাজ ও রাজনীতির বিভিন্ন সমস্যার প্রতি আলোকপাত করেছেন। তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন সমর্থক ছিলেন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তাঁর সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের আধুনিকতার পথকে মসৃণ করেছে। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন শ্রেষ্ঠ কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক, অনুবাদক, এবং সাংবাদিক হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

* সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৮)
* পদ্মভূষণ (১৯৯১)
* বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ (১৯৯৬)
* রবীন্দ্র পুরস্কার (২০০২)

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

মন্তব্য করুন