প্রবাসের শেষে

150
0

যমুনা, আমার হাত ধরো, স্বর্গে যাবো।
এসো, মুখে রাখো মুখ, চোখে চোখ, শরীরে শরীর
নবীনা পাতার মতো শুদ্ধরূপ, এসো
স্বর্গ খুব দুরে নয়, উত্তর সমুদ্র থেকে যে রকম বসন্ত প্রবাসে
উড়ে আসে কলস্বর, বাহু থেকে শীতের উত্তাপ
যে রকম অপর বুকের কাছে ঋণী হয়; যমুনা, আমার হাত ধরো,
স্বর্গে যাবো।

আমার প্রবাস আজ শেষ হলো, এরকম মধুর বিচ্ছেদ
মানুষ জানেনি আর। যমুনা আমার সঙ্গী-সহস্র রুমাল
স্বর্গের উদ্দেশ্যে ওড়ে; যমুনা তোমায় আমি নক্ষত্রের অতি প্রতিবেশী
করে রাখি, আসলে কি স্বাতী নক্ষত্রের সেই প্রবাদ মাখানো অশ্রূ তুমি নও?
তুমি নও ফেলে আসা লেবুর পাতার ঘ্রাণে জ্যোৎস্নাময় রাত?
তুমি নও ক্ষীণ ধূপ? তুমি কেউ নও
তুমিই বিস্মৃতি, তুমি শব্দময়ী, বর্ণ-নারী, স্তন ও জঙ্ঘায় নারী তুমি,
ভ্রমণে শয়নে তুমি সকল গ্রনে’র যুক্ত প্রণয় পিপাসা
চোখের বিশ্বাসে নারী, স্বেদে চুলে, নোখের ধুলোয়
প্রত্যেক অণুতে নারী, নারীর ভিতরে নারী, শূণ্যতায় সহাস্য সুন্দরী,
তুমিই গায়ত্রী ভাঙা মণীষার উপহাস, তুমি যৌবনের
প্রত্যেক কবির নীরা, দুনিয়ার সব দাপাদাপি ক্রুদ্ধ লোভ
ভুল ও ঘুমের মধ্যে তোমার মাধুরী ছুঁয়ে নদীর তরঙ্গ
পাপীকে চুম্বন করো তুমি, তাই দ্বার খোলে স্বর্গের প্রহরী।

তুমি এ রকম? তুমি কেউ নও
তুমি শুধু আমার যমুনা।

হাত ধরো, স্বরবৃত্ত পদক্ষেপে নাচ হোক, লজ্জিত জীবন
অন্তরীক্ষে বর্ণনাকে দৃশ্য করে, এসো হাত ধরো।
পৃথিবীতে বড় বেশী দুঃখ আমি পেয়ে গেছি, অবিশ্বাসে
আমি খুনী, আমি পাতাল শহরে জালিয়াৎ, আমি অরণ্যেব
পলাতক, মাংসের দোকানে ঋণী, উৎসব ভাঙার ছদ্মবেশী গুপ্তচর।
তবুও দ্বিধায় আমি ভুলি নি স্বর্গের পথ, যে রকম প্রাক্তন স্বদেশ।
তুমি তো জানো না কিছু, না প্রেম, না নিচু স্বর্গ, না জানাই ভালো
তুমিই কিশোরী নদী, বিস্মৃতির স্রোত, বিকালের পুরস্কার……
আয় খুকী, স্বর্গের বাগানে আজ ছুটোছুটি করি।।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়<span class="bp-verified-badge"></span>
লিখেছেন

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ - ২৩ অক্টোবর ২০১২) একজন প্রখ্যাত বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক, অনুবাদক, এবং সাংবাদিক। তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর জেলায়। তাঁর পিতা ছিলেন কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক কালীপদ গঙ্গোপাধ্যায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পড়াশোনা কলকাতায়। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাহিত্যিক জীবন শুরু হয় কবিতার মাধ্যমে। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ "স্মৃতিস্তম্ভ" প্রকাশিত হয় ১৯৫২ সালে। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল:

* "অর্জুন" (১৯৫৪)
* "প্রথম আলো" (১৯৫৬)
* "সেই সময়" (১৯৬৩)
* "পূর্ব-পশ্চিম" (১৯৭১)
* "আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি" (১৯৭৭)
* "ভানু ও রাণু" (১৯৮২)
* "অন্ধকারের আলো" (১৯৯৭)

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাগুলি আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাঁর কবিতাগুলি সাধারণ মানুষের জীবন, প্রেম, ভালোবাসা, প্রকৃতি, দেশপ্রেম, ও সমাজ বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটায়। তাঁর কবিতার ভাষা ছিল সরল ও সহজবোধ্য।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একজন সফল ঔপন্যাসিকও ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হল:

* "হঠাৎ নীরার জন্য" (১৯৬৩)
* "শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা" (১৯৬৬)
* "অর্ধেক জীবন" (১৯৭৩)
* "অরণ্যের দিনরাত্রি" (১৯৭৬)
* "কাকাবাবু" (১৯৮১)
* "মনের মানুষ" (১৯৮৬)
* "আয়নায় মুখ" (১৯৯০)

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছোটগল্পকার হিসেবেও সফল ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছোটগল্পগুলির সংকলনগুলি হল:

* "এখনও দুপুর" (১৯৬৮)
* "আমার ছেলেবেলা" (১৯৭২)
* "রূপসী বাংলা" (১৯৭৫)
* "আমার সময়" (১৯৮০)
* "ছোটগল্পসমগ্র" (১৯৯৩)

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একজন প্রগতিশীল চিন্তাবিদ ছিলেন। তিনি তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে সমাজ ও রাজনীতির বিভিন্ন সমস্যার প্রতি আলোকপাত করেছেন। তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন সমর্থক ছিলেন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তাঁর সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের আধুনিকতার পথকে মসৃণ করেছে। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন শ্রেষ্ঠ কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক, অনুবাদক, এবং সাংবাদিক হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

* সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৮)
* পদ্মভূষণ (১৯৯১)
* বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ (১৯৯৬)
* রবীন্দ্র পুরস্কার (২০০২)

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

মন্তব্য করুন