সে বড়ো সুখের সময় নয়, সে বড়ো আনন্দের সময় নয়

187
0

পা থেকে মাথা পর্যন্ত টলমল করে, দেয়ালে দেয়াল, কার্নিশে কার্নিশ,
ফুটপাত বদল হয় মধ্যরাতে
বাড়ি ফেরার সময়, বাড়ির ভিতর বাড়ি, পায়ের ভিতর পা,
বুকের ভিতর বুক
আর কিছু নয়— ( আরো অনেক কিছু ? ) — তারও আগে
পা থেকে মাথা পর্যন্ত টলমল করে, দেয়ালে দেয়াল, কার্নিশে কার্নিশ
ফুটপাত বদল হয় মধ্যরাতে
বাড়ি ফেরার সময়, বাড়ির ভিতর বাড়ি, পায়ের ভিতর পা, বুকের ভিতরে বুক
আর কিছু নয় |

‘হ্যান্ডস্ আপ’—হাত তুলে ধরো – যতক্ষণ পর্যন্ত না কেউ
তোমাকে তুলে নিয়ে যায়
কালো গাড়ির ভিতরে আবার কালো গাড়ি, তার ভিতরে আবার কালো গাড়ি
সারবন্দী জানলা, দরজা, গোরস্থান –- ওলোট পালট কঙ্কাল
কঙ্কালের ভিতরে শাদা ঘুণ ভিতরে জীবন, জীবনের ভিতরে
মৃত্যু—সুতরাং
মৃত্যুর ভিতরে মৃত্যু
আর কিছু নয় !

‘হ্যান্ডস্ আপ’—হাত তুলে ধরো— যতক্ষণ পর্যন্ত না কেউ
তোমাকে তুলে নিয়ে যায়
তুলে ছুঁড়ে ফেলে গাড়ির বাইরে, কিন্তু অন্য গাড়ির ভিতর
যেখানে সব সময় কেউ অপেক্ষা করে থাকে—পলেস্তারা মুঠো করে বটচারার মতন
কেউ না কেউ, যাকে তুমি চেনো না
অপেক্ষা করে থাকে পাকার আড়ালে শক্ত কুঁড়ির মতন
মাকড়সার সোনালি ফাঁস হাতে, মালা
তোমাকে পরিয়ে দেবে— তোমার বিবাহ মধ্যরাতে, যখন ফুটপাত বদল হয়
—পা থেকে মাথা পর্যন্ত টলমল করে
দেয়ালে দেয়াল, কার্নিশে কার্নিশ

মনে করো, গাড়ি রেখে ইস্টিশান দৌড়চ্ছে, নিবন্ত ডুমের পাশে তারার আলো
মনে করো জুতো হাঁটছে, পা রয়েছে স্থির – আকাশ-পাতাল এতোল-বেতোল
মনে করো, শিশুর কাঁধে মড়ার পাল্কি ছুটছে নিমতলা – পরপারে
বুড়োদের লম্বালম্বি বাসরঘরী নাচ—
সে বড়ো সুখের সময় নয়, সে বড়ো আনন্দের সময় নয়
তখনই
পা থেকে মাথা পর্যন্ত টলমল করে, দেয়ালে দেয়াল, কার্নিশে কার্নিশ,
ফুটপাত বদল হয় মধ্যরাতে
বাড়ি ফেরার সময়, বাড়ির ভিতর বাড়ি. পায়ের ভিতরে পাপ, বুকের ভিতর বুক
আর কিছু নয় ||

শক্তি চট্টোপাধ্যায়
লিখেছেন

শক্তি চট্টোপাধ্যায়

শক্তি চট্টোপাধ্যায় (২৫ নভেম্বর ১৯৩৩ - ২৩ মার্চ ১৯৯৫) ছিলেন ভারতীয় বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, লেখক ও অনুবাদক, যিনি জীবনানন্দ-উত্তর যুগের বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান আধুনিক কবি হিসেবে বিবেচিত। বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি বিশেষভাবে পরিচিত এবং আলোচিত ছিলেন। ষাটের দশকে যে চারজন কবিকে হাংরি আন্দোলনের জনক মনে করা হয় তাদের মধ্যে শক্তি চট্টোপাধ্যায় অন্যতম।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৩ সালের ২৫ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের জয়নগর মাজিলপুর গ্রামে। তার পিতা বামানাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একজন শিক্ষক এবং মাতা কমলা দেবী ছিলেন একজন গৃহিণী। শক্তির প্রাথমিক শিক্ষা জয়নগরের বিদ্যালয়ে শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তার পরিবার কলকাতায় চলে আসে এবং সেখানে তিনি বিদ্যাসাগর কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৯৫১ সালে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৫৫ সালে তিনি বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করার পর শক্তি কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি সাহিত্যিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করতে শুরু করেন এবং বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "হাংরি" ১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয়।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তার আধুনিকতা। তিনি তার কবিতায় আধুনিক জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। তার কবিতায় রয়েছে আবেগ, অনুভূতি, ও বাস্তবতার মিশ্রণ। তিনি তার কবিতায় নতুন ভাষার ব্যবহার করেছেন এবং নতুন মাত্রা যোগ করেছেন।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে:

* হাংরি (১৯৬১)
* যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো (১৯৮২)
* কবিতা সংগ্রহ (১৯৯৬)

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অন্যান্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে:

* উপন্যাস: রাগমূর্তি (১৯৬০), অরণ্য আপন (১৯৭২), নদীর বাঁকে (১৯৮৬)
* ছোটগল্প: অন্ধকারের ভেতর (১৯৬৩), পতাকা (১৯৭২), ঘরের ভিতর (১৯৮৬)
* প্রবন্ধ: সাহিত্য ও সমাজ (১৯৬৪), সাহিত্য ও জীবন (১৯৭৫), সাহিত্য ও রাজনীতি (১৯৮৫)

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। তার কবিতার মাধ্যমে তিনি আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন দিগন্তে নিয়ে গেছেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন অমর কবি হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

শক্তি চট্টোপাধ্যায় ১৯৯৫ সালের ২৩ মার্চ কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

মন্তব্য করুন