সুখে থাকো

108
0

চক্রাকারে বসেছি পাঁচজনে
মাঠে, পিছনের পর্চে আলো
অন্ধকার সন্ধ্যা নামে বিড়ালের মতো ধীর পায়ে
তুমি এসে বসেছো আসনে অকস্মাৎ।
হঠাৎই পথে ঘুরতে-ঘুরতে কীভাবে এসেছো
একেবারে পাশে,
তোমার গায়ের গন্ধ নাকে এসে লাগে
বৃদ্ধের রোমাঞ্চ হয়!
খুব ভালো আছো?
অন্তত এখন, তুমি?
তুমি ঠিক আছো?
না থাকার মানে হয়
বিশেষত যখন এসেছো
কৃপা করে।
কৃপা বাক্যবন্ধ তুমি কিছুতে ছাড়বে না!
ছাড়া যায়?
কিছুক্ষণ আছো?
হ্যাঁ, হাতে সময় আছে
তাই, পায়ে পায়ে
এখানে এসেছি চলে।
শুনেছি, সন্ধ্যার আড্ডা তোমার এখানে
যদি ভাগ্য ভালো হয়, দেখা পেয়ে যাবো,
ভাগ্য ভালো।
এমনই এসেছি,
তোমাকে দেখার জন্য আজ কটি দিন
কী ইচ্ছা করছিলো।
জানালে যেতাম।
কিছুতে যেতে না।

‘কাল আসবো’ বলে তুমি পালিয়ে এসেছো
সেই কাল কবে হবে? ভেবেছি তোমার
সময় অত্যন্ত কম,
আমি নিজে আসি।
আমার সময় আছে…দীর্ঘ অবসর!
চক্রাকারে বসেছি পাঁচজনে।
পাঁচজনের মধ্যে থেকে একা একা একান্ত দুজন,
পাঁচজন বুঝেছে সবই
নিচুস্বরে কথা চালাচলি করে যাচ্ছে অহেতুক শ্লথ,
পাঁচজনের মধ্যে থেকে একা একা একান্ত দুজন
অকস্মাৎ।

ধীরে ধীরে রাত বেড়ে যায়।
সন্ধ্যার আঁচলে মুড়ে করতল অন্য পাতে পায়–
করস্পর্শ।
পাখির পালক হাত খেলা করে কর্কশ মুঠিতে,
পাঁচজনে সমস্ত দেখে ধীরে ধীরে কোথা উঠে যায়
একাকী দুজনে রেখে।
চলো পৌঁছে দিয়ে আসি তোমার বাড়িতে।
যাবে?
কেন নয়।
চলো।

একগাড়ি আঁধার আজ দক্ষিণে দৌড়ায়
দ্রুত।
মনে হয়, গতি বড় দ্রুত বিদ্যুতের মতো!
কথা বলো।
কী কথা বলার?
আছে।
কাছে আছো, এ যথেষ্ট নয়?
যথেষ্ট যথেষ্ট। আজ দিন বড় বেশি কিছু দিল।
সত্যি একে দেওয়া বলো এখনো তুমিও।

না বলার সাধ্য আছে?
বহুদিনই ভাবি, হঠাৎ চলেই যাই, গিয়ে দেখে আসি–
আছোটা কেমন?
কিন্তু বড়ো ভয় করে
যদি তুমি কিছু ভাবো?
অন্যের সংসারে ও কেন হঠাৎ আসে?
সেই জন্যে ভয়,
জড়িয়ে যাবার ভয়,
মন্দ ভাগ্যে ভয়!
বড়ো দ্রুত যাচ্ছে গাড়ি সমূহ দক্ষিণে

গাড়ির আঁধার হলো হাসিতে উজ্জ্বল
এবং মধুর গন্ধ ছড়ালো বাতাসে।
আবাল্য তোমার কিছু পাওনা রয়ে গেলো।
আমি বলি শোধ হয়ে গেছে।
আজি, এইমাত্র, এই এতো কাছে পেয়ে
জীবনে এতোটা কাছে তোমাকে পাইনি,
একা বহুক্ষণ ধরে গাড়ির ভিতরে।

গাড়ি বাঁয়ে চলো, গাড়ি এখন দক্ষিণে
কিশোর প্রেমের মতো অত্যন্ত রঞ্জিত
এই সুসময় আজ দিনশেষে কেন!

মূর্ছার ভিতরে নেমে, দু’কদম গিয়ে
ফিরে এসেছিলে…
আজ নয়, অন্য একদিন।
আর দরজা থেকে একা ক্লান্ত ফিরে যাও,
দুর্বলতা গলা টিপে আছে,
আজ নয়, অন্য কোনদিন
আমার সর্বস্ব নিও।
আজ নয়, অন্য কোদিন…
তুমি হাত দুটি ধরে মুখমণ্ডলের
উপরে আগ্নেয় পাত কেন বা ঘটালে?
সর্বস্ব পেয়েছি আমি আজই, অকস্মাৎ।
সুখে থাকো, আমি ফিরে যাই
একা একা।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়
লিখেছেন

শক্তি চট্টোপাধ্যায়

শক্তি চট্টোপাধ্যায় (২৫ নভেম্বর ১৯৩৩ - ২৩ মার্চ ১৯৯৫) ছিলেন ভারতীয় বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, লেখক ও অনুবাদক, যিনি জীবনানন্দ-উত্তর যুগের বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান আধুনিক কবি হিসেবে বিবেচিত। বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি বিশেষভাবে পরিচিত এবং আলোচিত ছিলেন। ষাটের দশকে যে চারজন কবিকে হাংরি আন্দোলনের জনক মনে করা হয় তাদের মধ্যে শক্তি চট্টোপাধ্যায় অন্যতম।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৩ সালের ২৫ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের জয়নগর মাজিলপুর গ্রামে। তার পিতা বামানাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একজন শিক্ষক এবং মাতা কমলা দেবী ছিলেন একজন গৃহিণী। শক্তির প্রাথমিক শিক্ষা জয়নগরের বিদ্যালয়ে শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তার পরিবার কলকাতায় চলে আসে এবং সেখানে তিনি বিদ্যাসাগর কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৯৫১ সালে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৫৫ সালে তিনি বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করার পর শক্তি কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি সাহিত্যিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করতে শুরু করেন এবং বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "হাংরি" ১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয়।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তার আধুনিকতা। তিনি তার কবিতায় আধুনিক জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। তার কবিতায় রয়েছে আবেগ, অনুভূতি, ও বাস্তবতার মিশ্রণ। তিনি তার কবিতায় নতুন ভাষার ব্যবহার করেছেন এবং নতুন মাত্রা যোগ করেছেন।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে:

* হাংরি (১৯৬১)
* যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো (১৯৮২)
* কবিতা সংগ্রহ (১৯৯৬)

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অন্যান্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে:

* উপন্যাস: রাগমূর্তি (১৯৬০), অরণ্য আপন (১৯৭২), নদীর বাঁকে (১৯৮৬)
* ছোটগল্প: অন্ধকারের ভেতর (১৯৬৩), পতাকা (১৯৭২), ঘরের ভিতর (১৯৮৬)
* প্রবন্ধ: সাহিত্য ও সমাজ (১৯৬৪), সাহিত্য ও জীবন (১৯৭৫), সাহিত্য ও রাজনীতি (১৯৮৫)

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। তার কবিতার মাধ্যমে তিনি আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন দিগন্তে নিয়ে গেছেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন অমর কবি হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

শক্তি চট্টোপাধ্যায় ১৯৯৫ সালের ২৩ মার্চ কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

মন্তব্য করুন