সম্পর্ক

71
0

“সম্পর্কের বাজারে পৌঁছে
পা দুটো থেমে গেল…
সম্পর্ক বিক্রি হচ্ছিল
ওখানে খোলা বাজারে…

আমি কাঁপতে কাঁপতে জিজ্ঞেস করলাম,
“কি দামে, বেচছো ভাই
এই সম্পর্কগুলো ..? ”
দোকানদার জিজ্ঞেস করলো:

“কোনটা সম্পর্ক টা
বানাতে চান আপনি?…”
ছেলের .. না বাবার ..?
বোনের .. না ভাইয়ের ..?

বলুন আপনি কোনটা চান.?
মানবতার … না ভালোবাসার ..?
মায়ের… না বিশ্বাসের…?
বাবুজি, কিছু তো বলুন
কোনটি নিতে চান…
চুপচাপ দাঁড়িয়ে কেন?
ঠিক ভেবে বলুন!…

ভয়ে ভয়ে বললাম
“বন্ধুর ..”
দোকানদার ভিজে চোখে বললো:

“দুনিয়া টা এই সম্পর্কে ই তো
টিকে আছে…”
তবে মাফ করবেন বাবুজি,
এই সম্পর্কটা বিক্রীর জন্য নয় ..
এর কোন দাম দিতে পারবেন না,

আর যে দিন এটাও বিক্রী হয়ে যাবে
সেদিন দুনিয়াটা উজাড় হয়ে যাবে…..

শক্তি চট্টোপাধ্যায়
লিখেছেন

শক্তি চট্টোপাধ্যায়

শক্তি চট্টোপাধ্যায় (২৫ নভেম্বর ১৯৩৩ - ২৩ মার্চ ১৯৯৫) ছিলেন ভারতীয় বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, লেখক ও অনুবাদক, যিনি জীবনানন্দ-উত্তর যুগের বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান আধুনিক কবি হিসেবে বিবেচিত। বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি বিশেষভাবে পরিচিত এবং আলোচিত ছিলেন। ষাটের দশকে যে চারজন কবিকে হাংরি আন্দোলনের জনক মনে করা হয় তাদের মধ্যে শক্তি চট্টোপাধ্যায় অন্যতম।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৩ সালের ২৫ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের জয়নগর মাজিলপুর গ্রামে। তার পিতা বামানাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একজন শিক্ষক এবং মাতা কমলা দেবী ছিলেন একজন গৃহিণী। শক্তির প্রাথমিক শিক্ষা জয়নগরের বিদ্যালয়ে শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তার পরিবার কলকাতায় চলে আসে এবং সেখানে তিনি বিদ্যাসাগর কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৯৫১ সালে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৫৫ সালে তিনি বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করার পর শক্তি কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি সাহিত্যিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করতে শুরু করেন এবং বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "হাংরি" ১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয়।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তার আধুনিকতা। তিনি তার কবিতায় আধুনিক জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। তার কবিতায় রয়েছে আবেগ, অনুভূতি, ও বাস্তবতার মিশ্রণ। তিনি তার কবিতায় নতুন ভাষার ব্যবহার করেছেন এবং নতুন মাত্রা যোগ করেছেন।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে:

* হাংরি (১৯৬১)
* যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো (১৯৮২)
* কবিতা সংগ্রহ (১৯৯৬)

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অন্যান্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে:

* উপন্যাস: রাগমূর্তি (১৯৬০), অরণ্য আপন (১৯৭২), নদীর বাঁকে (১৯৮৬)
* ছোটগল্প: অন্ধকারের ভেতর (১৯৬৩), পতাকা (১৯৭২), ঘরের ভিতর (১৯৮৬)
* প্রবন্ধ: সাহিত্য ও সমাজ (১৯৬৪), সাহিত্য ও জীবন (১৯৭৫), সাহিত্য ও রাজনীতি (১৯৮৫)

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। তার কবিতার মাধ্যমে তিনি আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন দিগন্তে নিয়ে গেছেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন অমর কবি হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

শক্তি চট্টোপাধ্যায় ১৯৯৫ সালের ২৩ মার্চ কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

মন্তব্য করুন