একবার তুমি

27
0

একবার তুমি ভালোবাসতে চেষ্টা কর–
দেখবে, নদির ভিতরে, মাছের বুক থেকে পাথর ঝরে পড়ছে
পাথর পাথর পাথর আর নদী-সমুদ্রের জল
নীল পাথর লাল হচ্ছে, লাল পাথর নীল
একবার তুমি ভাল বাসতে চেষ্টা কর ।

বুকের ভেতরে কিছু পাথর থাকা ভাল–ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
সমস্ত পায়ে-হাঁটা পথই যখন পিচ্ছিল, তখন ওই পাথরের পাল একের পর এক বিছিয়ে
যেন কবিতার নগ্ন ব্যবহার, যেন ঢেউ, যেন কুমোরটুলির সলমা-চুমকি-জরি-মাখা প্রতিমা
বহুদূর হেমন্তের পাঁশুটেনক্ষত্রের দরোজা পর্যন্ত দেখে আসতে পারি ।

বুকের ভেতরে কিছু পাথর থাকা ভাল
চিঠি-পত্রের বাক্স বলতে তো কিছু নেই–পাথরের ফাঁক-ফোকরে রেখে এলেই কাজ হাসিল–
অনেক সময় তো ঘর গড়তেও মন চায় ।

মাছের বুকের পাথর ক্রমেই আমাদের বুকে এসে জায়গা করে নিচ্ছে
আমাদের সবই দরকার । আমরা ঘরবাড়ি গড়বো–সভ্যতার একটা স্থায়ী স্তম্ভ তুলে ধরবো ।

রূপোলি মাছ পাথর ঝরাতে-ঝরাতে চলে গেলে
একবার তুমি ভালবাসতে চেষ্টা করো ।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়
লিখেছেন

শক্তি চট্টোপাধ্যায়

শক্তি চট্টোপাধ্যায় (২৫ নভেম্বর ১৯৩৩ - ২৩ মার্চ ১৯৯৫) ছিলেন ভারতীয় বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, লেখক ও অনুবাদক, যিনি জীবনানন্দ-উত্তর যুগের বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান আধুনিক কবি হিসেবে বিবেচিত। বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি বিশেষভাবে পরিচিত এবং আলোচিত ছিলেন। ষাটের দশকে যে চারজন কবিকে হাংরি আন্দোলনের জনক মনে করা হয় তাদের মধ্যে শক্তি চট্টোপাধ্যায় অন্যতম।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৩ সালের ২৫ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের জয়নগর মাজিলপুর গ্রামে। তার পিতা বামানাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একজন শিক্ষক এবং মাতা কমলা দেবী ছিলেন একজন গৃহিণী। শক্তির প্রাথমিক শিক্ষা জয়নগরের বিদ্যালয়ে শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তার পরিবার কলকাতায় চলে আসে এবং সেখানে তিনি বিদ্যাসাগর কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৯৫১ সালে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৫৫ সালে তিনি বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করার পর শক্তি কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি সাহিত্যিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করতে শুরু করেন এবং বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "হাংরি" ১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয়।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তার আধুনিকতা। তিনি তার কবিতায় আধুনিক জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। তার কবিতায় রয়েছে আবেগ, অনুভূতি, ও বাস্তবতার মিশ্রণ। তিনি তার কবিতায় নতুন ভাষার ব্যবহার করেছেন এবং নতুন মাত্রা যোগ করেছেন।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে:

* হাংরি (১৯৬১)
* যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো (১৯৮২)
* কবিতা সংগ্রহ (১৯৯৬)

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অন্যান্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে:

* উপন্যাস: রাগমূর্তি (১৯৬০), অরণ্য আপন (১৯৭২), নদীর বাঁকে (১৯৮৬)
* ছোটগল্প: অন্ধকারের ভেতর (১৯৬৩), পতাকা (১৯৭২), ঘরের ভিতর (১৯৮৬)
* প্রবন্ধ: সাহিত্য ও সমাজ (১৯৬৪), সাহিত্য ও জীবন (১৯৭৫), সাহিত্য ও রাজনীতি (১৯৮৫)

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। তার কবিতার মাধ্যমে তিনি আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন দিগন্তে নিয়ে গেছেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন অমর কবি হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

শক্তি চট্টোপাধ্যায় ১৯৯৫ সালের ২৩ মার্চ কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

মন্তব্য করুন