এবার হয়েছে সন্ধ্যা

164
0

এবার হয়েছে সন্ধ্যা। সারাদিন ভেঙেছো পাথর
পাহাড়ের কোলে
আষাঢ়ের বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলো শালের জঙ্গলে
তোমারও তো শ্রান্ত হলো মুঠি
অন্যায় হবে না – নাও ছুটি
বিদেশেই চলো
যে কথা বলনি আগে, এ-বছর সেই কথা বলো।

শ্রাবনের মেঘ কি মন্থর!
তোমার সর্বাঙ্গ জুড়ে জ্বর
ছলোছলো
যে কথা বলনি আগে, এ-বছর সেই কথা বলো।

এবার হয়েছে সন্ধ্যা, দিনের ব্যস্ততা গেছে চুকে
নির্বাক মাথাটি পাতি, এলায়ে পড়িব তব বুকে
কিশলয়, সবুজ পারুল
পৃথিবীতে ঘটনার ভুল
চিরদিন হবে
এবার সন্ধ্যায় তাকে শুদ্ধ করে নেওয়া কি সম্ভবে?

তুমি ভালোবেসেছিলে সব
বিরহে বিখ্যাত অনুভব
তিলপরিমাণ
স্মৃতির গুঞ্জন – নাকি গান
আমার সর্বাঙ্গ করে ভর?
সারাদিন ভেঙ্গেছো পাথর
পাহাড়ের কোলে
আষাঢ়ের বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলো শালের জঙ্গলে
তবু নও ব্যথায় রাতুল
আমার সর্বাংশে হলো ভুল
একে একে শ্রান্তিতে পড়েছি নুয়ে। সকলে বিদ্রূপভরে দ্যাখে।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়
লিখেছেন

শক্তি চট্টোপাধ্যায়

শক্তি চট্টোপাধ্যায় (২৫ নভেম্বর ১৯৩৩ - ২৩ মার্চ ১৯৯৫) ছিলেন ভারতীয় বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, লেখক ও অনুবাদক, যিনি জীবনানন্দ-উত্তর যুগের বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান আধুনিক কবি হিসেবে বিবেচিত। বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি বিশেষভাবে পরিচিত এবং আলোচিত ছিলেন। ষাটের দশকে যে চারজন কবিকে হাংরি আন্দোলনের জনক মনে করা হয় তাদের মধ্যে শক্তি চট্টোপাধ্যায় অন্যতম।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৩ সালের ২৫ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের জয়নগর মাজিলপুর গ্রামে। তার পিতা বামানাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একজন শিক্ষক এবং মাতা কমলা দেবী ছিলেন একজন গৃহিণী। শক্তির প্রাথমিক শিক্ষা জয়নগরের বিদ্যালয়ে শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তার পরিবার কলকাতায় চলে আসে এবং সেখানে তিনি বিদ্যাসাগর কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৯৫১ সালে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৫৫ সালে তিনি বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করার পর শক্তি কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি সাহিত্যিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করতে শুরু করেন এবং বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "হাংরি" ১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয়।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তার আধুনিকতা। তিনি তার কবিতায় আধুনিক জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। তার কবিতায় রয়েছে আবেগ, অনুভূতি, ও বাস্তবতার মিশ্রণ। তিনি তার কবিতায় নতুন ভাষার ব্যবহার করেছেন এবং নতুন মাত্রা যোগ করেছেন।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে:

* হাংরি (১৯৬১)
* যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো (১৯৮২)
* কবিতা সংগ্রহ (১৯৯৬)

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অন্যান্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে:

* উপন্যাস: রাগমূর্তি (১৯৬০), অরণ্য আপন (১৯৭২), নদীর বাঁকে (১৯৮৬)
* ছোটগল্প: অন্ধকারের ভেতর (১৯৬৩), পতাকা (১৯৭২), ঘরের ভিতর (১৯৮৬)
* প্রবন্ধ: সাহিত্য ও সমাজ (১৯৬৪), সাহিত্য ও জীবন (১৯৭৫), সাহিত্য ও রাজনীতি (১৯৮৫)

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। তার কবিতার মাধ্যমে তিনি আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন দিগন্তে নিয়ে গেছেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন অমর কবি হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

শক্তি চট্টোপাধ্যায় ১৯৯৫ সালের ২৩ মার্চ কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

মন্তব্য করুন