টেলিফোনে তুমি

69
0

টেলিফোনে তুমি সেদিন সন্ধ্যেবেলা
কান্নায় ভেঙে পড়েছিলে প্রিয়তমা।
বুঝতে পারি নি তোমার ভেতরে কত
কত ব্যথা আর হাহাকার ছিল জমা।

তোমার হৃদয় গোলাপবাগান জেনে
ছিলাম ব্যস্ত একাকী নিজেরই মনে।
তোমার গোলাপ ছিন্ন হয়েছে শুধু
এবং আমিও বিদ্ধ কাঁটার বনে।

যে যুগে আমরা করি আজ বসবাস,
তার সন্ত্রাসে জীবনের ভিত কাঁপে।
তুমি কি কখনও দেখ নি আমার মুখ
কেমন দগ্ধ প্রাক্তন অভিশাপে?

চৌদিকে কত ভীষণ দৃশ্য দেখি,
জ্যোৎস্না রাতের প্রহরও মাতমে কাটে।
তবুও অনেক ভাঙা সেতু পার হ’য়ে
ক্যামেলিয়া হাতে বসেছি তোমার ঘাটে।

কখনও-সখনও রুক্ষ চলার পথে
ঝড়ঝাপটায় যদি ভুল হ’য়ে যায়
হয়ো না ক্রূদ্ধ অথবা হতাশাময়,
আজও তোমাকে জীবন আমার চায়।

হঠাৎ যখন মৃত্যুর ছায়া কাঁপে,
তোমার কথাই খুব বেশি ক’রে ভাবি।
যতদিন বেঁচে আছি অনিত্য ঘরে,
আমার হৃদয়ে থাকবে তোমার দাবি।

টেলিফোনে তুমি যেদিন কেঁদেছ, আমি
কুড়িয়ে নিয়েছি তোমার চোখের মোতি।
ঝ’রে-পড়া সেই অক্ষয় মোতিগুলো
আমার তিমিরে ছড়াক নিয়ত জ্যোতি।

শামসুর রহমান
লিখেছেন

শামসুর রহমান

শামসুর রহমান ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি, সাংবাদিক, এবং রাজনীতিবিদ। তিনি বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে বিবেচিত। শামসুর রহমান ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি সাংবাদিক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেন। তিনি ১৯৫৫ সালে জোহরা বেগমকে বিয়ে করেন। শামসুর রহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ "দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে" ১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয়। তিনি তার জীবদ্দশায় ৪০টিরও বেশি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার কবিতায় তিনি দেশপ্রেম, মানবতাবাদ, এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের বিষয়গুলিকে তুলে ধরেছেন। শামসুর রহমান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে বিবেচিত। তিনি তার কবিতা "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো পদ্মা-মেঘনা-যমুনা" মুক্তিযুদ্ধের স্লোগানে পরিণত হয়। শামসুর রহমান তার কবিতা, সাহিত্যকর্ম, এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তিনি ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, এবং ২০০০ সালে একুশে পদক লাভ করেন। শামসুর রহমান ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বাংলাদেশের সাহিত্যের এক অমর কবি হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

মন্তব্য করুন