নিঝুম কাফেতে

246
0

বহুদিন পর সেদিন হিমেল রাতে
ছিলাম দু’জন নিঝুম কাফেতে ব’সে।
কফির পেয়ালা ছিল সম্মুখে রাখা,
মুহূর্তগুলো পড়ছিল মৃদু খ’সে।

কথোপকথনে আমরা উঠি নি মেতে,
হয়েছে কেবল দৃষ্টির বিনিময়।
তার হাত আর আমার হাতের মাঝে
ছিল কবোষ্ণ ঘনিষ্ঠ পরিচয়।

অনুরাগে তার দৃষ্টি যখন কাঁপে
হাওয়ায় মোমের নবীন আলোর মতো,
হৃদয়ে আমার জলতরঙ্গ বাজে,
করোটিতে ফোটে শত তারা অবিরত।

রাস্তার পিঠে হাওয়ায় চাবুক পড়ে;
আমাদের মনে কত অনুক্ত কথা।
তার অন্তরে গুপ্ত কী আছে আজও,
আমি বই সব জানবার ব্যাকুলতা।

বাধা সত্ত্বেও পেয়েছি মিলন-সুখ,
অমাবস্যায় জ্বলেছে তো পূর্ণিমা।
হিংসুটে সব মনের বিকার থাকে
রেখেছি মুক্ত স্বপ্ন-সাধের সীমা।

কিন্তু এখন ভূমিকম্পের পরে
মনে হানা দেয় বারবার কী যে ত্রাস!
প্রেমময় এই মধুর ক্ষণেও ভাবি-
ভয়াবহ কিছু করবে কি সব গ্রাস?

আমাদের মুখে যুগের করাল ছায়া,
স্মৃতিতে পুরাণ-প্রাণীদের হিংস্রতা।
শিকারি কুকুর নিত্য করছে তাড়া,
বারবার থাবা মেলেছে বর্বরতা।

নিঝুম কাফেতে আছি তার মুখোমুখি,
তবুও নিজেকে লাগে অসহায়, একা।
ব্যাপক আঁধারে এইটুকু দীপশিখা-
যুগসঙ্কটে তার সাথে হ’ল দেখা।

শামসুর রহমান
লিখেছেন

শামসুর রহমান

শামসুর রহমান ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি, সাংবাদিক, এবং রাজনীতিবিদ। তিনি বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে বিবেচিত। শামসুর রহমান ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি সাংবাদিক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেন। তিনি ১৯৫৫ সালে জোহরা বেগমকে বিয়ে করেন। শামসুর রহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ "দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে" ১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয়। তিনি তার জীবদ্দশায় ৪০টিরও বেশি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার কবিতায় তিনি দেশপ্রেম, মানবতাবাদ, এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের বিষয়গুলিকে তুলে ধরেছেন। শামসুর রহমান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে বিবেচিত। তিনি তার কবিতা "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো পদ্মা-মেঘনা-যমুনা" মুক্তিযুদ্ধের স্লোগানে পরিণত হয়। শামসুর রহমান তার কবিতা, সাহিত্যকর্ম, এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তিনি ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, এবং ২০০০ সালে একুশে পদক লাভ করেন। শামসুর রহমান ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বাংলাদেশের সাহিত্যের এক অমর কবি হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

মন্তব্য করুন