বিচারের কথা কেউ বলছে না কেন

বিচারের কথা কেউ বলছে না কেন আজো সুতীব্র ভাষায়?
কোথায় লুকোলাে তারা রক্তমাখা হাত নিয়ে কার হেফাজতে?
খুনিরা কোথায়? রাজপথ দেখতে চাইছে নির্মােহ বিচার।

উড়ে এসে জুড়ে বসা একটি দশক ধরে হত্যা নিপীড়ন,
শ্বাসরুদ্ধ, কণ্ঠরুদ্ধ, স্বেচ্ছাচারে কলংকিত পুরােটা সময়-
তসরুপ হরিলুটে যারা ছিলাে ব্যতিব্যস্ত পেয়ারা গােলাম,
ক্ষমতাকে বকলেস আঁটা কুত্তার মতােন পেলে পুষে যারা
এতােদিন কেড়ে খেলাে পুরাে ননিটুকু দুধের পুরােটা সর।

উন্নয়ন রাজনীতি চর্চা কোরে উন্নত করেছে যারা ক্যাশ,
ব্যক্তিগত চেকনাই, লাবন্যশোভন মেদ স্বাস্থ্য সমাচার,
কোথায় তাহারা? জনতা দেখতে চায় এর প্রকাশ্য বিচার।

মায়েদের চোখ ভেজা, এখনাে বােনের মুখে কৃষ্ণপক্ষ রাত,
অনুজের রক্তের ভেতর পুড়ছে এখনাে কোনাে এক লরী,
কোনাে এক শুষ্কহীন শ্রীমতী পাজেরাে জিপ, দীপ্তিময় ক্রলিং।

গাছের খেয়েছে সব, কুড়িয়েছে জেনে শুনে তলার পুরােটা,
মিনারে প্রবল কণ্ঠ, মধ্যরাতে ফিস ফিস প্রাসাদে প্রাসাদে-
পচা গলা ওইসব ফ্যাকাশে বীভৎস মুখ দেখতে চায় না,
রাজপথ এখন দেখতে চায় তরতাজা তুমুল তীক্ষ্ণতা,
রাজপথ বিচার দেখতে চায় সততায় নিকশিত রায়।

এখনাে মায়ের চোখ ভেজা, বােনেরা পাথর আর অনুজের
রক্তের ভেতরে এক কুশপুত্তলিকা পুড়ছে এখনাে, তার
হাত থেকে জনতা নিয়েছে কেড়ে ক্ষমতার আশ্চর্য প্রদীপ।
ইতিহাস বিকৃত করেছে যারা, তারা কই? কোথায় দস্যুরা?

অপরাধীদের জনতা দেখতে চায় কাঠগড়ায় এখন,
বাহাত্তরের সে-ভুল ফের যেন এই দেশে আবার না ঘটে।

রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
লিখেছেন

রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (১৬ অক্টোবর ১৯৫৬ – ২১ জুন ১৯৯১) ছিলেন একজন বাংলাদেশি কবি, গীতিকার, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সাংবাদিক, এবং রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কবি হিসেবে পরিচিত। তার কবিতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা, প্রেম, প্রকৃতি, ও মানবতাবাদের বলিষ্ঠ প্রকাশ ঘটেছে।

শহিদুল্লাহ ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শেখ ওয়ালিউল্লাহ ছিলেন একজন চিকিৎসক এবং মা শিরিয়া বেগম ছিলেন গৃহিণী। তিনি বাগেরহাটের মংলা উপজেলার মিঠেখালি গ্রামে তাঁর নানা বাড়িতে বেড়ে ওঠেন।

শহিদুল্লাহ ১৯৭৩ সালে ঢাকা ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্সসহ এমএ পাস করেন।

শহিদুল্লাহ ১৯৭০-এর দশকে সাহিত্যচর্চায় আত্মপ্রকাশ করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "উপদ্রুত উপকূল" ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি "ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম", "মানুষের মানচিত্র", "মৌলিক মুখোশ", "বিষ বিরিক্ষের বীজ", "ছোবল", "রুদ্রসমগ্র", "শ্রেষ্ঠ কবিতা"সহ আরও বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার কবিতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা, প্রেম, প্রকৃতি, ও মানবতাবাদের বলিষ্ঠ প্রকাশ ঘটেছে।

শহিদুল্লাহ কবিতা ছাড়াও গল্প, নাটক, গান, ও সাংবাদিকতায়ও সমানভাবে সফল ছিলেন। তার গল্পের মধ্যে "অনির্বাণ", "হীরামন", "অগ্নিগর্ভ", "হাজার বছরের নীরবতা", ও "সীমানা প্রাচীর" উল্লেখযোগ্য। তার নাটকের মধ্যে "একজন সৈনিকের চিঠি", "একজন বীর সন্তান", "সোনালি কাঁকড়ার দেশে", ও "লাল গম্বুজ" উল্লেখযোগ্য। তার গানগুলি বাংলাদেশের জনপ্রিয় গানগুলির মধ্যে অন্যতম।

শহিদুল্লাহ ১৯৮১ সালে বিখ্যাত লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন। কিন্তু তাদের সেই দাম্পত্যজীবন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৮৬ সালে তারা বিবাহবিচ্ছেদ করেন।

শহিদুল্লাহ ১৯৯১ সালের ২১ জুন মাত্র ৩৫ বছর বয়সে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর তাকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কবি হিসেবে গণ্য করা হয়।

শহিদুল্লাহর সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে এক অমূল্য সম্পদ। তার কবিতা, গল্প, নাটক, গান, ও সাংবাদিকতা বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় সমৃদ্ধি এনেছে। তার সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা, প্রেম, প্রকৃতি, ও মানবতাবাদের বাণী ছড়িয়ে দিয়েছেন।

মন্তব্য করুন