ক্রুশবিদ্ধ যিশু আমার বুকে

শহরের সমস্ত রাস্তায় তোমাকে খুঁজেছি।
দেশ থেকে দেশান্তরে খুঁজেছি।
খৃষ্টাব্দের এথেন্স নগরীতে এক সুরম্য সন্ধায়
মহামান্য সোক্রেতাস এসে বিনম্র সহাস্যে
করমর্দন কোরে বলেছিলো “ কি খুঁজছেন?”

আমি নিরুত্তর পুনরায় খুঁজেছি তোমাকে।
আদি থেকে সম্প্রতি খুঁজেছি।

সদ্য শাদা পতাকা ওড়া প্যালেস্টাইনে
সশস্ত্র জনৈক সৈনিককে জিজ্ঞাসা করলাম
“ওকে দেখেছো?” সে বিবর্ন চোখে তাকালো।
ভিয়েৎনামের ফ্যান্টমের ছোবলে নিহত বিভৎস
এক বৃদ্ধার চোখে আমারই প্রশ্নের নীল পোষ্টার।

মাইলাই থেকে একাত্তরের ধুসর বাংলাদেশে
সহস্র মৃত্যুর শোভাযাত্রায় সেদিনও আমি
একটি প্রশ্নের ব্যানার দেখেছিলাম
আমার সন্ধানী চোখে।

হে মহামান্য যীশু, মুহম্মদ তোমরা কি খুঁজেছিলে
আমি জানি না, আমি শতাব্দীর কান্না দেখেছি শুধু।
মান্যবর যীশু যে ক্রুশে তোমাকে করেছে নিহত
সে ক্রুশ আজ আমারই বুকে প্রজ্জ্বল্যমান।

অসংখ্য আগ্নেয়গিরির উৎগারিত তপ্ত লাভা
আমার বুকের নিবাসে উৎক্ষিপ্ত।
ক্রুশবিদ্ধ মৃত্যু যন্ত্রনায় আমার হৃদপিন্ড আজ যীশু-

তাই আজো আমি তোমাকে খুঁজছি-
লোক থেকে লোকান্তরে খুঁজছি-
আদি থেকে সম্প্রতি খুঁজছি।

রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
লিখেছেন

রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (১৬ অক্টোবর ১৯৫৬ – ২১ জুন ১৯৯১) ছিলেন একজন বাংলাদেশি কবি, গীতিকার, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সাংবাদিক, এবং রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কবি হিসেবে পরিচিত। তার কবিতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা, প্রেম, প্রকৃতি, ও মানবতাবাদের বলিষ্ঠ প্রকাশ ঘটেছে।

শহিদুল্লাহ ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শেখ ওয়ালিউল্লাহ ছিলেন একজন চিকিৎসক এবং মা শিরিয়া বেগম ছিলেন গৃহিণী। তিনি বাগেরহাটের মংলা উপজেলার মিঠেখালি গ্রামে তাঁর নানা বাড়িতে বেড়ে ওঠেন।

শহিদুল্লাহ ১৯৭৩ সালে ঢাকা ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্সসহ এমএ পাস করেন।

শহিদুল্লাহ ১৯৭০-এর দশকে সাহিত্যচর্চায় আত্মপ্রকাশ করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "উপদ্রুত উপকূল" ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি "ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম", "মানুষের মানচিত্র", "মৌলিক মুখোশ", "বিষ বিরিক্ষের বীজ", "ছোবল", "রুদ্রসমগ্র", "শ্রেষ্ঠ কবিতা"সহ আরও বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার কবিতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা, প্রেম, প্রকৃতি, ও মানবতাবাদের বলিষ্ঠ প্রকাশ ঘটেছে।

শহিদুল্লাহ কবিতা ছাড়াও গল্প, নাটক, গান, ও সাংবাদিকতায়ও সমানভাবে সফল ছিলেন। তার গল্পের মধ্যে "অনির্বাণ", "হীরামন", "অগ্নিগর্ভ", "হাজার বছরের নীরবতা", ও "সীমানা প্রাচীর" উল্লেখযোগ্য। তার নাটকের মধ্যে "একজন সৈনিকের চিঠি", "একজন বীর সন্তান", "সোনালি কাঁকড়ার দেশে", ও "লাল গম্বুজ" উল্লেখযোগ্য। তার গানগুলি বাংলাদেশের জনপ্রিয় গানগুলির মধ্যে অন্যতম।

শহিদুল্লাহ ১৯৮১ সালে বিখ্যাত লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন। কিন্তু তাদের সেই দাম্পত্যজীবন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৮৬ সালে তারা বিবাহবিচ্ছেদ করেন।

শহিদুল্লাহ ১৯৯১ সালের ২১ জুন মাত্র ৩৫ বছর বয়সে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর তাকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কবি হিসেবে গণ্য করা হয়।

শহিদুল্লাহর সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে এক অমূল্য সম্পদ। তার কবিতা, গল্প, নাটক, গান, ও সাংবাদিকতা বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় সমৃদ্ধি এনেছে। তার সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা, প্রেম, প্রকৃতি, ও মানবতাবাদের বাণী ছড়িয়ে দিয়েছেন।

মন্তব্য করুন