অগ্ন্যুৎসব

74
0

ছিল তা এক অগ্ন্যুৎসব, সেদিন আমি
সবটুকু বুক রেখেছিলাম স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রে
জীবন বাজি ধরেছিলাম প্রেমের নামে
রক্ত ঋণে স্বদেশ হলো,
তোমার দিকে চোখ ছিলো না
জন্মভূমি সেদিন তোমার সতীন ছিলো ।

আজকে আবার জীবন আমার ভিন্ন স্বপ্নে অংকুরিত অগ্ন্যুৎসবে
তোমাকে চায় শুধুই তোমায় ।

রঙিন শাড়ির হলুদ পাড়ে ঋতুর প্লাবন নষ্ট করে
ভর দুপুরে শুধুই কেন হাত বেঁধেছো বুক ঢেকেছো
যুঁই চামেলী বেলীর মালায়,
আমার বুকে সেদিন যেমন আগুন ছিলো
ভিন্নভাবে জ্বলছে আজও,
তবু সবই ব্যর্থ হবে
তুমি কেবল যুঁই চামেলী বেলী ফুলেই মগ্ন হলে ।

তার চেয়ে আজ এসো দু’জন জাহিদুরের গানের মতন
হৃদয় দিয়ে বোশেখ ডাকি, দু’জীবনেই বোশেখ আনি ।
জানো হেলেন, আগুন দিয়ে হোলি খেলায় দারুণ আরাম
খেলবো দু’জন এই শপথে
এসো স্ব-কাল শুদ্ধ করি দুর্বিনীত যৌবনেরে ।

রফিক আজাদ
লিখেছেন

রফিক আজাদ

**রফিক আজাদ** (১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪১ - ১২ মার্চ ২০১৬) ছিলেন একজন বাংলাদেশী আধুনিক কবি। তিনি ষাটের দশকের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে চিহ্নিত। তিনি ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন সাহিত্যপত্রের সম্পাদনা করেছেন এবং জীবিকাসূত্রে সরকারি চাকুরিও করেছেন।

রফিক আজাদের জন্ম টাঙ্গাইল জেলার গুণী গ্রামে। তার পিতা সালিম উদ্দিন খান এবং মা রাবেয়া খান। তিনি ১৯৫৯ সালে টাঙ্গাইলের কালিহাতি হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক এবং ১৯৬৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।


রফিক আজাদ ১৯৬০-এর দশকে সাহিত্যচর্চায় আত্মপ্রকাশ করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "অসম্ভবের পায়ে" ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি "সীমাবদ্ধ জলে সীমিত সবুজে", "হাতুড়ির নিচেয় জীবন", "অনেক বেশি দূরে নেই", "অপার অরণ্য", "ভয়ঙ্কর নির্জনতা", "প্রকৃতির কবিতা", "নির্বাচিত কবিতা", "কবিতাসমগ্র"সহ আরও বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার কবিতায় প্রেম, প্রকৃতি, মানবতা, সমাজ, রাজনীতি, ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে।


রফিক আজাদের কবিতার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো তার সরল ও প্রাঞ্জল ভাষা, গভীর উপলব্ধি, ও মানবিকতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। তার কবিতা সাধারণ মানুষের হৃদয়ে সহজেই প্রবেশ করে। তার কবিতায় প্রেম, প্রকৃতি, মানবতা, সমাজ, রাজনীতি, ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে।


রফিক আজাদ তার কাব্য প্রতিভার জন্য অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেছেন। তিনি ১৯৮৬ সালে কবিতায় বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং ২০১৩ সালে একুশে পদক লাভ করেন।


রফিক আজাদ একজন সফল কবি হিসেবে বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদান রেখেছেন। তার কবিতা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সম্পদ।


**রফিক আজাদের কবিতার কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয়:**


* প্রেম: রফিক আজাদের কবিতার একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো প্রেম। তার কবিতায় প্রেমের বিভিন্ন রূপের প্রকাশ ঘটেছে। তিনি প্রকৃতি প্রেম, মানব প্রেম, ও ঈশ্বর প্রেমের কথা বলেছেন।
* প্রকৃতি: রফিক আজাদ প্রকৃতির একজন নিবেদিত প্রেমিক ছিলেন। তার কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য ও রহস্যের বর্ণনা সুনিপুণভাবে ফুটে উঠেছে।
* মানবতা: রফিক আজাদ একজন মানবতাবাদী কবি ছিলেন। তার কবিতায় তিনি মানুষের অধিকার, স্বাধীনতা, ও সমতার কথা বলেছেন।
* সমাজ: রফিক আজাদ সমাজের বিভিন্ন সমস্যার প্রতিবাদ করেছেন তার কবিতায়। তিনি দারিদ্র্য, অশিক্ষা, ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
* রাজনীতি: রফিক আজাদ একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ ছিলেন। তার কবিতায় তিনি রাজনৈতিক বিষয়ের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।


**রফিক আজাদের কবিতার কিছু উল্লেখযোগ্য কবিতা:**


* "অসম্ভবের পায়ে"
* "সীমাবদ্ধ জলে সীমিত সবুজে"
* "হাতুড়ির নিচেয় জীবন"
* "অনেক বেশি দূরে নেই"
* "অপার অরণ্য"
* "ভয়ঙ্কর নির্জনতা"
* "প্রকৃতির কবিতা"
* "নির্বাচিত কবিতা"


রফিক আজাদের কবিতার মধ্য দিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যে একটি স্থায়ী স্থান করে নিয়েছেন। তার কবিতা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সম্পদ।

মন্তব্য করুন