শারদ প্রকৃতি

70
0

স্বচ্ছ সুনীল শান্ত আকাশে নিতল নয়ন জাগে
স্নিগ্ধ হাসিটি বিকশি উঠেছে শিশির আর্দ্র ফুলে।
রক্ত কমল হংস মিথুন চিত্রিত অঞ্চলা
নির্মল নারী নদীর বসনে আবরি সোনার তনু
শারদলক্ষ্ণী এলো।

কক্ষে কাঁপিছে ধানের ঝাঁপি শষ্য উছল খেতে
নব রবিকর গলিত কনকে প্লাবিত চরণতল
অস্ত ভানুর গোধূলি সিঁদুরে রচিত সীমন্ত শোভা
রজত ধবল পেলব কোমল জোৎস্নাবগুণ্ঠনে
শারদলক্ষ্ণী এলো।

চঞ্চল লঘু নির্বারি মেঘে ধ্বনিছে শঙ্খরোল
ভোরের শুভ্র অভ্র ভরিছে প্রভাতি পাখির সুর
চ্যুত শেফালির আলিপনা ঘেরা শ্যাম তৃণ অঙ্গনে
চারু চরণের চিহ্ন আঁকিয়া ধীর পদ সঞ্চারে
শারদলক্ষ্ণী এলো।

শিথিল মুঠিতে কাশ মঞ্জরী চিকন চামর দোলে
কোমল কণ্ঠে স্থল কমলের কমনীয় ফুলহার
কবরী আবরি কবরীগুচ্ছ কুসুমিত কুরুবক
অতি সুন্দর অতসী বলয়ে বাহু বল্লবী বেড়ি
শারদলক্ষ্ণী এলো।

চরণপদ্মে রক্তজবার নব আলক্ত রেখা
স্বর্ণ নূপুর নিক্কন শুনি শিশুতরু মর্মরে
সাগরে শৈলে প্রান্তরে বনে বিথারি বর্ণ বিভা
দিগ দিগন্ত দীপ্ত করিয়া দিব্য প্রভায় আজি
শারদলক্ষ্ণী এলো।

রাধারাণী দেবী
লিখেছেন

রাধারাণী দেবী

রাধারাণী দেবী বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বাঙালি কবি। ভাষার মাধুর্যে ভাবের স্নিগ্ধতায় আর ছন্দের সাবলীল দক্ষতায় 'অপরাজিতা দেবী' ছদ্মনামে সাহিত্য জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী মহিলা কবি।

রাধারাণী দেবী ১৩ নভেম্বর, ১৯০৩ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের কর্মী ও মাতা ছিলেন গৃহিণী। রাধারাণী দেবীর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বাড়িতে। পরে তিনি কলকাতার বেথুন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং বেথুন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।

রাধারাণী দেবীর লেখা প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯১৩ সালে 'মানসী' পত্রিকায়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অপরাজিতা' প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালে। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:

* 'সুন্দর ও ভালোবাসা' (১৯২৬)
* 'হৃদয়ের কথা' (১৯২৯)
* 'প্রকৃতির কথা' (১৯৩২)
* 'সত্য ও সুন্দর' (১৯৩৫)
* 'জীবন ও মৃত্যু' (১৯৪২)
* 'অঞ্জলি' (১৯৪৭)
* 'আলো ও অন্ধকার' (১৯৫০)
* 'মন ও জীবন' (১৯৫২)

রাধারাণী দেবীর কবিতাগুলির মধ্যে প্রেম, প্রকৃতি, দেশপ্রেম, মানবতাবাদ ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। তার কবিতাগুলির ভাষা ও ছন্দ অত্যন্ত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। তিনি বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে এক অনন্য স্থান দখল করে আছেন।

রাধারাণী দেবীর সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি ১৯৬৪ সালে সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার, ১৯৬৮ সালে পদ্মভূষণ, ১৯৭৩ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার এবং ১৯৮২ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

রাধারাণী দেবী ১৯৮৯ সালের ৩০ নভেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য জগত এক অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

রাধারাণী দেবীর কবিতার কিছু বিখ্যাত লাইন:

* "প্রিয়তম, আমি তোমার অপেক্ষায় বসে আছি,
* যেন প্রদীপের শিখায় বসে থাকে মশা।"
* "আমার ভালোবাসা তোমার জন্য,
* আমার গান তোমার জন্য।"
* "হে প্রকৃতি, তুমি আমার মা,
* তোমার কোলে আমি সুখী।"
* "হে দেশ, তোমার জন্য আমার জীবন,
* তোমার জন্য আমার মৃত্যু।"

রাধারাণী দেবীর কবিতাগুলি আজও পাঠকদের মন ছুঁয়ে যায়। তার কবিতাগুলি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।

মন্তব্য করুন