সচিব

27
0

খরচ কমানো হুজুগ উঠেছে দেশে
তোমারো চাকরি যায় যদি এতে শেষে।
যাবেই না হয়। চিন্তু কিসের অত?
যতই ভাববে বাড়বে ভাবনা তত।
এতদিন ধরে করেছ চাকরি ঢের
এখন না হয় মায়ায় কাটালে এর
বয়স তোমার চল্লিশ নয় পুরো
এখনই নিজেকে মনে করো কেন বুড়ো?

শরীর খারাপ হবে দিনরাত ভেবে
আমি বলি, তুমি ব্যবসায় পড় নেবে।
এই গাঁয়েতে নেই ডিসপেনসারি মোটে
ওষুধ কিনতে সকলে শহরে ছোটে।
ওষুধের ছোটো দোকান একটা খুলে
চাকরি করার দুর্ভেোগ যাও ভুলে।
ভারি তো মাইনে, গোটা সত্তর টাকা
তার জন্যেতে বন্দীর মত থাকা।

বেলা আটটার ডালভাত খেয়ে দুটি
ট্রেন ধরবার জন্যেতে ছুটোছুটি।
রাত আটটার ফের কলকাতা থেকে
এতে কি কখনো শরীর স্বাস্থ্য টেঁকে?

কাজ নেই আর চাকরি তোমার করে
চৌধুরীদের খগেন বাবুকে ধরে।
চৌরাস্তার মোড়ে একখানা ঘর
ভাড়া নাও তুমি। আমি দেব তারপর।
আসবার আর মাল কেনবার টাকা
কোথা পাবো? কেন? গয়নার রাশি রাখা।
কিসের জন্যে? কাজেই যদি না লাগে
কথা শুনে বাপু হাড় জ্বলে যায় রাগে।

ঘর খরচায়-দরকার ফি মাসেই?
সব বাড়িখানা জুড়ে থেকে কাজ নেই।
বার মহলটা সারিয়ে সুরিয়ে নিয়ে
রান্নার ঘর করো গেটে তুলে দিয়ে।

এবাড়ির যদি ভাড়া দাও আধখানা
গোটা কুড়ি টাকা মাসে ঠিক পাব জানা।
মনে জোর নিয়ে লাগ, নিশ্চয় হবে
এই মাসে সব ঠিকঠাক করো তবে।।

রাধারাণী দেবী
লিখেছেন

রাধারাণী দেবী

রাধারাণী দেবী বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বাঙালি কবি। ভাষার মাধুর্যে ভাবের স্নিগ্ধতায় আর ছন্দের সাবলীল দক্ষতায় 'অপরাজিতা দেবী' ছদ্মনামে সাহিত্য জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী মহিলা কবি।

রাধারাণী দেবী ১৩ নভেম্বর, ১৯০৩ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের কর্মী ও মাতা ছিলেন গৃহিণী। রাধারাণী দেবীর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বাড়িতে। পরে তিনি কলকাতার বেথুন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং বেথুন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।

রাধারাণী দেবীর লেখা প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯১৩ সালে 'মানসী' পত্রিকায়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অপরাজিতা' প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালে। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:

* 'সুন্দর ও ভালোবাসা' (১৯২৬)
* 'হৃদয়ের কথা' (১৯২৯)
* 'প্রকৃতির কথা' (১৯৩২)
* 'সত্য ও সুন্দর' (১৯৩৫)
* 'জীবন ও মৃত্যু' (১৯৪২)
* 'অঞ্জলি' (১৯৪৭)
* 'আলো ও অন্ধকার' (১৯৫০)
* 'মন ও জীবন' (১৯৫২)

রাধারাণী দেবীর কবিতাগুলির মধ্যে প্রেম, প্রকৃতি, দেশপ্রেম, মানবতাবাদ ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। তার কবিতাগুলির ভাষা ও ছন্দ অত্যন্ত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। তিনি বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে এক অনন্য স্থান দখল করে আছেন।

রাধারাণী দেবীর সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি ১৯৬৪ সালে সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার, ১৯৬৮ সালে পদ্মভূষণ, ১৯৭৩ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার এবং ১৯৮২ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

রাধারাণী দেবী ১৯৮৯ সালের ৩০ নভেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য জগত এক অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

রাধারাণী দেবীর কবিতার কিছু বিখ্যাত লাইন:

* "প্রিয়তম, আমি তোমার অপেক্ষায় বসে আছি,
* যেন প্রদীপের শিখায় বসে থাকে মশা।"
* "আমার ভালোবাসা তোমার জন্য,
* আমার গান তোমার জন্য।"
* "হে প্রকৃতি, তুমি আমার মা,
* তোমার কোলে আমি সুখী।"
* "হে দেশ, তোমার জন্য আমার জীবন,
* তোমার জন্য আমার মৃত্যু।"

রাধারাণী দেবীর কবিতাগুলি আজও পাঠকদের মন ছুঁয়ে যায়। তার কবিতাগুলি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।

মন্তব্য করুন