আকুল আহ্বান

124
0

সন্ধে হল, গৃহ অন্ধকার—
মা গো, হেথায় প্রদীপ জ্বলে না।
একে একে সবাই ঘরে এল,
আমায় যে মা, ‘মা’ কেউ বলে না।
সময় হল, বেঁধে দেব চুল,
পরিয়ে দেব রাঙা কাপড়খানি।
সাঁঝের তারা সাঁঝের গগনে—
কোথায় গেল রানী আমার রানী।

রাত্রি হল, আঁধার করে আসে,
ঘরে ঘরে প্রদীপ নিবে যায়।
আমার ঘরে ঘুম নেইকো শুধু—
শূন্য শেজ শূন্য-পানে চায়।
কোথায় দুটি নয়ন ঘুমে-ভরা,
নেতিয়ে-পড়া ঘুমিয়ে-পড়া মেয়ে।
শ্রান্ত দেহ ঢুলে পড়ে, তবু
মায়ের তরে আছে বুঝি চেয়ে।

আঁধার রাতে চলে গেলি তুই,
আঁধার রাতে চুপি চুপি আয়।
কেউ তো তোরে দেখতে পাবে না,
তারা শুধু তারার পানে চায়।
এ জগৎ কঠিন— কঠিন—
কঠিন, শুধু মায়ের প্রাণ ছাড়া—
সেইখানে তুই আয় মা, ফিরে আয়—
এত ডাকি, দিবি নে কি সাড়া।

ফুলের দিনে সে যে চলে গেল,
ফুল-ফোটা সে দেখে গেল না,
ফুলে ফুলে ভরে গেল বন
একটি সে তো পরতে পেল না।
ফুল সে ফোটে ফুল যে ঝরে যায়—
ফুল নিয়ে যে আর-সকলে পরে,
ফিরে এসে সে যদি দাঁড়ায়,
একটিও যে রইবে না তার তরে।

খেলত যারা তারা খেলতে গেছে,
হাসত যারা তারা আজো হাসে,
তার তরে তো কেহই বসে নেই,
মা যে কেবল রয়েছে তার আশে।
হায় রে বিধি, সব কি ব্যর্থ হবে—
ব্যর্থ হবে মায়ের ভালোবাসা।
কত জনের কত আশা পূরে,
ব্যর্থ হবে মার প্রাণেরই আশা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
লিখেছেন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তিনি ছিলেন একজন বহুব্যাক্তিত্ব, যার কর্মের প্রতিফলন ঘটেছে সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা, দর্শন, সমাজকর্ম ও রাজনীতিতে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বী ঠাকুর পরিবারের সন্তান। তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন ব্রাহ্ম ধর্মগুরু ও লেখক। তার মাতা সারদা দেবী ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ গৃহবধূ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার শৈশব থেকেই সাহিত্য ও সংগীতের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই কবিতা লিখতেন এবং সংগীত শিখতেন। তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ এবং তিনি রবীন্দ্রনাথকে সঙ্গীতের তালিম দিয়েছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৭৮ সালে ব্রিটিশ সরকারের ইংরেজি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু তিনি সেখানে বেশিদিন পড়াশোনা করেননি। ১৮৮০ সালে তিনি কলেজে ছেড়ে দিয়ে বাড়িতেই পড়াশোনা চালিয়ে যান।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীকে বিয়ে করেন। তাদের চার মেয়ে এবং এক ছেলে ছিল।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮২ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "সোনারতরী" প্রকাশ করেন। এরপর তিনি আরও অনেক কাব্যগ্রন্থ, কবিতা, গান, নাটক, উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ ও চিত্রকর্ম রচনা করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাগুলির মধ্যে "গীতাঞ্জলি", "চিত্রাঙ্গদা", "চোখের জল", "শেষের কবিতা", "ঘরে বাইরে", "নৌকাডুবি", "শেষের রাত্রি" ও "পথের পাঁচালী" উল্লেখযোগ্য।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে "গীতাঞ্জলি" কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি এটি প্রাপ্ত প্রথম ভারতীয় এবং এশীয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন বিশ্ববরেণ্য সাহিত্যিক। তার রচনাগুলি বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

মন্তব্য করুন