অবরুদ্ধ ছিল বায়ু

175
0

অবরুদ্ধ ছিল বায়ু; দৈত্য সম পুঞ্জ মেঘভার
ছায়ার প্রহরীব্যূহে ঘিরে ছিল সূর্যের দুয়ার;
অভিভূত আলোকের মূর্ছাতুর ম্লান অসম্মানে
দিগন্ত আছিল বাষ্পাকুল। যেন চেয়ে ভূমিপানে
অবসাদে-অবনত ক্ষীণশ্বাস চির প্রাচীনতা
স্তব্ধ হয়ে আছে বসে দীর্ঘকাল, ভুলে গেছে কথা,
ক্লান্তিভারে আঁখিপাতা বদ্ধপ্রায়।
শূন্যে হেনকালে
জয়শঙ্খ উঠিল বাজিয়া। চন্দন তিলক ভালে
শরৎ উঠিল হেসে চমকিত গগন প্রাঙ্গণে;
পল্লবে পল্লবে কাঁপি বনলক্ষ্মী কিঙ্কিণী কঙ্কণে

বিচ্ছুরিল দিকে দিকে জ্যোতিষ্কণা। আজি হেরি চোখে
কোন্‌ অনির্বচনীয় নবীনেরে তরুণ আলোকে।
যেন আমি তীর্থযাত্রী অতিদূর ভাবী কাল হতে
মন্ত্রবলে এসেছি ভাসিয়া। উজান স্বপ্নের স্রোতে
অকস্মাৎ উত্তরিনু বর্তমান শতাব্দীর ঘাটে
যেন এই মুহূর্তেই। চেয়ে চেয়ে বেলা মোর কাটে।
আপনারে দেখি আমি আপন বাহিরে, যেন আমি
অপর যুগের কোনো অজানিত, সদ্য গেছে নামি’
সত্তা হতে প্রত্যহের আচ্ছাদন; অক্লান্ত বিস্ময়
যার পানে চক্ষু মেলি তারে যেন আঁকড়িয়া রয়
পুষ্পলগ্ন ভ্রমরের মতো। এই তো ছুটির কাল,
সর্ব দেহ মন হতে ছিন্ন হোলো অভ্যাসের জাল,
নগ্ন চিত্ত মগ্ন হোলো সমস্তের মাঝে। মনে ভাবি,
পুরানোর দুর্গদ্বারে মৃত্যু যেন খুলে দিল চাবি,
নূতন বাহিরি’ এল; তুচ্ছতার জীর্ণ উত্তরীয়
ঘুচালো সে; অস্তিত্বের পূর্ণ মূল্যে কী অভাবনীয়
প্রকাশিত তার স্পর্শে, রজনীর মৌন সুবিপুল

প্রভাতের গানে সে মিশায়ে দিল; কালো তার চুল
পশ্চিম দিগন্ত পারে নামহীন বন-নীলিমায়
বিস্তারিল রহস্য নিবিড়।
আজি মুক্তিমন্ত্র গায়
আমার বক্ষের মাঝে দূরের পথিকচিত্ত মম,
সংসার যাত্রার প্রান্তে সহমরণের বধূ সম।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
লিখেছেন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তিনি ছিলেন একজন বহুব্যাক্তিত্ব, যার কর্মের প্রতিফলন ঘটেছে সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা, দর্শন, সমাজকর্ম ও রাজনীতিতে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বী ঠাকুর পরিবারের সন্তান। তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন ব্রাহ্ম ধর্মগুরু ও লেখক। তার মাতা সারদা দেবী ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ গৃহবধূ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার শৈশব থেকেই সাহিত্য ও সংগীতের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই কবিতা লিখতেন এবং সংগীত শিখতেন। তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ এবং তিনি রবীন্দ্রনাথকে সঙ্গীতের তালিম দিয়েছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৭৮ সালে ব্রিটিশ সরকারের ইংরেজি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু তিনি সেখানে বেশিদিন পড়াশোনা করেননি। ১৮৮০ সালে তিনি কলেজে ছেড়ে দিয়ে বাড়িতেই পড়াশোনা চালিয়ে যান।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীকে বিয়ে করেন। তাদের চার মেয়ে এবং এক ছেলে ছিল।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮২ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "সোনারতরী" প্রকাশ করেন। এরপর তিনি আরও অনেক কাব্যগ্রন্থ, কবিতা, গান, নাটক, উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ ও চিত্রকর্ম রচনা করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাগুলির মধ্যে "গীতাঞ্জলি", "চিত্রাঙ্গদা", "চোখের জল", "শেষের কবিতা", "ঘরে বাইরে", "নৌকাডুবি", "শেষের রাত্রি" ও "পথের পাঁচালী" উল্লেখযোগ্য।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে "গীতাঞ্জলি" কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি এটি প্রাপ্ত প্রথম ভারতীয় এবং এশীয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন বিশ্ববরেণ্য সাহিত্যিক। তার রচনাগুলি বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

মন্তব্য করুন