সাহিত্য রস

সবচেয়ে বড় কবিতা, গল্প, ছন্দ এবং গান প্রকাশের ওয়েবসাইট

অণুকাব্য

1
0

(১)
স্বপ্ন আমার জোনাকি ,
দীপ্ত প্রাণের মণিকা ,
স্তব্ধ আঁধার নিশীথে
উড়িছে আলোর কণিকা ॥
(২)
আমার লিখন ফুটে পথধারে
ক্ষণিক কালের ফুলে ,
চলিতে চলিতে দেখে যারা তারে
চলিতে চলিতে ভুলে ॥
(৩)
প্রজাপতি সেতো বরষ না গণে ,
নিমেষ গণিয়া বাঁচে ,
সময় তাহার যথেষ্ট তাই আছে ॥
(৪)
দুঃখের আগুন কোন্
জ্যোতির্ময় পথরেখা টানে
বেদনার পরপার পানে॥
(৫)
দেবমন্দির-আঙিনাতলে
শিশুরা করেছে মেলা।
দেবতা ভোলেন পূজারি-দলে,
দেখেন শিশুর খেলা॥
(৬)
আকাশ ধরারে বাহুতে বেড়িয়া রাখে,
তবুও আপনি অসীম সুদূরে থাকে॥
(৮)
দূর এসেছিল কাছে–
ফুরাইলে দিন, দূরে চলে গিয়ে আরো সে নিকটে আছে।
(৯)
দাঁড়ায়ে গিরি, শির
মেঘে তুলে,
দেখে না সরসীর
বিনতি।
অচল উদাসীর
পদমূলে
ব্যাকুল রূপসীর
মিনতি॥
(১০)
মেঘ সে বাষ্পগিরি,
গিরি সে বাষ্পমেঘ,
কালের স্বপ্নে যুগে যুগে ফিরি ফিরি
এ কিসের ভাবাবেগ॥
(১১)
দুই তীরে তার বিরহ ঘটায়ে
সমুদ্র করে দান
অতল প্রেমের অশ্রুজলের গান॥
(১২)
পর্বতমালা আকাশের পানে চাহিয়া না কহে কথা,
অগমের লাগি ওরা ধরণীর স্তম্ভিত ব্যাকুলতা॥
(১৩)
একদিন ফুল দিয়েছিলে , হায় ,
কাঁটা বিঁধে গেছে তার ।
তবু , সুন্দর , হাসিয়া তোমায়
করিনু নমস্কার ॥
(১৪)
হে বন্ধু , জেনো মোর ভালোবাসা ,
কোনো দায় নাহি তার —
আপনি সে পায় আপন পুরস্কার ॥
(১৫)
স্বল্প সেও স্বল্প নয়, বড়োকে ফেলে ছেয়ে।
দু-চারিজন অনেক বেশি বহুজনের চেয়ে॥
(১৬)
মেঘের দল বিলাপ করে
আঁধার হল দেখে ,
ভুলেছে বুঝি নিজেই তারা
সূর্য দিল ঢেকে ॥
(১৭)
অসীম আকাশ শূন্য প্রসারি রাখে,
হোথায় পৃথিবী মনে মনে তার
অমরার ছবি আঁকে॥
(১৮)
আকর্ষণগুণে প্রেম এক ক’রে তোলে।
শক্তি শুধু বেঁধে রাখে শিকলে শিকলে॥
(১৯)
মহাতরু বহে
বহু বরষের ভার।
যেন সে বিরাট
এক মুহূর্ত তার॥
(২০)
স্তব্ধ অতল শব্দবিহীন মহাসমুদ্রতলে
বিশ্ব ফেনার পুঞ্জ সদাই ভাঙিয়া জুড়িয়া চলে॥
(২১)
মোর কাগজের খেলার নৌকা
ভেসে চলে যায় সোজা
বহিয়া আমার অকাজ দিনের
অলস বেলার বোঝা॥
(২২)
শিশির রবিরে শুধু জানে
বিন্দুরূপে আপন বুকের মাঝখানে॥
(২৩)
আপন অসীম নিষ্ফলতার পাকে
মরু চিরদিন বন্দী হইয়া থাকে॥
(২৪)
সাগরের কানে জোয়ার-বেলায়
ধীরে কয় তটভূমি,
“তরঙ্গ তব যা বলিতে চায়
তাই লিখে দাও তুমি।’

সাগর ব্যাকুল ফেন-অক্ষরে
যতবার লেখে লেখা
চির-চঞ্চল অতৃপ্তিভরে
ততবার মোছে রেখা ॥
(২৫)
স্তব্ধ হয়ে কেন্দ্র আছে, না দেখা যায় তারে
চক্র যত নৃত্য করি ফিরিছে চারি ধারে ।।
(২৬)
জীবন-খাতার অনেক পাতাই
এমনিতরো শূন্য থাকে;
আপন মনের ধেয়ান দিয়ে
পূর্ণ করে লও না তাকে।
সেথায় তোমার গোপন কবি
রচুক আপন স্বর্গছবি,
পরশ করুক দৈববাণী
সেথায় তোমার কল্পনাকে॥
(২৭)
ভেবেছিনু গনি গনি লব সব তারা —
গনিতে গনিতে রাত হয়ে যায় সারা ,
বাছিতে বাছিতে কিছু না পাইনু বেছে ।
আজ বুঝিলাম , যদি না চাহিয়া চাই
তবেই তো একসাথে সব-কিছু পাই —
সিন্ধুরে তাকায়ে দেখো , মরিয়ো না সেঁচে ॥
(২৮)
আকাশ কভু পাতে না ফাঁদ
কাড়িয়ে নিতে চাঁদে,
বিনা বাঁধনে তাই তো চাঁদ,
নিজেরে নিজে বাঁধে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
WRITTEN BY

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তিনি ছিলেন একজন বহুব্যাক্তিত্ব, যার কর্মের প্রতিফলন ঘটেছে সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা, দর্শন, সমাজকর্ম ও রাজনীতিতে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বী ঠাকুর পরিবারের সন্তান। তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন ব্রাহ্ম ধর্মগুরু ও লেখক। তার মাতা সারদা দেবী ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ গৃহবধূ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার শৈশব থেকেই সাহিত্য ও সংগীতের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই কবিতা লিখতেন এবং সংগীত শিখতেন। তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ এবং তিনি রবীন্দ্রনাথকে সঙ্গীতের তালিম দিয়েছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৭৮ সালে ব্রিটিশ সরকারের ইংরেজি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু তিনি সেখানে বেশিদিন পড়াশোনা করেননি। ১৮৮০ সালে তিনি কলেজে ছেড়ে দিয়ে বাড়িতেই পড়াশোনা চালিয়ে যান।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীকে বিয়ে করেন। তাদের চার মেয়ে এবং এক ছেলে ছিল।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮২ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "সোনারতরী" প্রকাশ করেন। এরপর তিনি আরও অনেক কাব্যগ্রন্থ, কবিতা, গান, নাটক, উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ ও চিত্রকর্ম রচনা করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাগুলির মধ্যে "গীতাঞ্জলি", "চিত্রাঙ্গদা", "চোখের জল", "শেষের কবিতা", "ঘরে বাইরে", "নৌকাডুবি", "শেষের রাত্রি" ও "পথের পাঁচালী" উল্লেখযোগ্য।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে "গীতাঞ্জলি" কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি এটি প্রাপ্ত প্রথম ভারতীয় এবং এশীয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন বিশ্ববরেণ্য সাহিত্যিক। তার রচনাগুলি বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

মন্তব্য করুন