প্রথম অতিথি

61
0

এরকম বাংলাদেশ কখনো দেখোনি তুমি,
মুহুর্তে সবুজ ঘাস পুড়ে যায়,
ত্রাসের আগুন লেগে লাল হয়ে জ্বলে উঠে চাঁদ,
নরম নদীর চর হা করা কবর হয়ে
গ্রাস করে পরম শত্রুকে,
মিত্রকে জয়ের চিহ্ন, পদতলে প্রেম,
ললাটে ধুলোর টিপ এঁকে দেয় মায়ের মতন,
এরকম বাংলাদেশ কখনো দেখোনি তুমি।

নদীর জলের সঙ্গে মানুষের রক্ত মিশে আছে,
হিজল গাছের ছায়া বিপ্লবের সমান বয়সী
রূপসী নারীর চুল ফূল নয়,
গুচ্ছ গুচ্ছ শোকের প্রতীক,
এরকম বাংলাদেশ কখনো দেখোনি তুমি,
কখনো দেখেনি কেউ ।
বাতাস – বাতাস শুধু নয়
ত্রিশ লক্ষ মানুষের দীর্ঘশ্বাসময়
আকাশ – আকাশ শুধু নয়
এরকম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নয়।

এখানে প্রানের মুল্যে নদীর জলের মধ্যে
আসে বান, টর্পেডো, টাইফুন, ঝড়
কালবৈশাখীর দুরন্ত তুফান
কোকিল – কোকিল শুধু নয়
পাখি শুধু পাখি নয় গাছে
বাউলের একতারা, উরুর অস্থির মতো
যেন আগ্নেয়াস্ত্রে বারুদের মজ্জা মিশে আছে ।

আজকাল গান শুধু গান নয়
সব গান অভিমান
প্রানের চিৎকার বলে ক্রুদ্ধ মনে হয়
এরকম বাংলাদেশ কখনো দেখেনি কেউ
তুমিই তার প্রথম অতিথি।

নির্মলেন্দু গুণ
লিখেছেন

নির্মলেন্দু গুণ

নির্মলেন্দু গুণ, একজন বাংলাদেশী কবি, গীতিকার, সাংবাদিক এবং চিত্রশিল্পী। তিনি ১৯৪৫ সালের ২১ জুন নেত্রকোনার বারহাট্টায় জন্মগ্রহণ করেন।

গুণ ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি সাংবাদিকতায় তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং দৈনিক ইত্তেফাক ও দৈনিক বাংলা পত্রিকায় কাজ করেন। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখেন।

গুণ একজন প্রতিভাবান কবি এবং তার কবিতা বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। তার কবিতায় নারীপ্রেম, শ্রেণীসংগ্রাম এবং স্বৈরাচার বিরোধিতা প্রভৃতি বিষয়বস্তু প্রাধান্য পায়। তার উল্লেখযোগ্য কবিতার মধ্যে রয়েছে “হুলিয়া”, “মানুষ”, “আফ্রিকার প্রেমের কবিতা”, “একটি অসমাপ্ত কবিতা” ইত্যাদি।

গুণ একজন জনপ্রিয় গীতিকারও। তিনি অনেক জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের গান রচনা করেছেন। তার রচিত গানগুলির মধ্যে রয়েছে “ওরে সোনা রোদ্দুর”, “ওরে নীল দরিয়া”, “আমি তোমার প্রেমে বলব না” ইত্যাদি।

গুণ তার সাহিত্যকর্মের জন্য অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ গীতিকার) লাভ করেন। তিনি ১৯৯৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

গুণ একজন সমাজসেবক ব্যক্তিও। তিনি অনেক সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন। তিনি বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতির বিকাশে বিশেষ অবদান রেখেছেন।

মন্তব্য করুন