বউ

78
0

কে কবে বলেছে হবে না? হবে,বউ থেকে হবে ।
একদি আমিও বলেছিঃ ‘ওসবে হবে না ।’
বাজে কথা । আজ বলি,হবে,বউ থেকে হবে ।
বউ থেকে হয় মানুষের পুনর্জন্ম,মাটি,লোহা,
সোনার কবিতা, —কী সে নয়?

গোলাপ,শেফালি,যুঁই,ভোরের আকাশে প্রজাপতি,
ভালোবাসা,ভাগ্য,ভাড়াবাড়ি ইতিপূর্বে এভাবে মিশেনি ।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল,দুইজন্ম এবার মিশেছে,দেখা যাক ।

হতচ্ছাড়া ব্যর্থ প্রেম,গাঁজা,মদ,নৈঃসঙ্গ আমার
ভালোবেসে হে তরুণ,তোমাকে দিলাম,তুমি নাও ।
যদি কোনদিন বড় কবি হও,আমার সাফল্য
কতদূর একদিন তুমি তা বুঝিবে ।

আমি কতো ভালোবাসা দু’পায়ে মাড়িয়ে অবশেষে,
কল্পনার মেঘলোক ছেড়ে পৌঁছেছি বাস্তব মেঘে ।
আজ রাত বৃষ্টি হবে মানুষের চিরকাম্য দাবির ভিতরে ।

তার শয্যাপাশে আমার হয়েছে স্থান, মুখোমুখি,
অনায়াসে আমি তা বলি না, বলে যারা জানে দূর থেকে ।
আমি কাছে থেকে জানি, বিনিময়ে আমাকে হয়েছে দিতে
জীবনের নানা মূল্যে কেনা বিশ্বখানি, তার হাতে তুলে ।
অনায়াসে আমিও পারিনি । ক্রমে ক্রমে, বিভিন্ন কিস্তিতে
আমি তা দিয়েছি, ফুলে ফুলে ভালোবেসে যেভাবে প্রেমিক ।

প্রথমে আত্মার দ্যুতি, তারপর তাকে ঘিরে মুগ্ধ আনাগোনা ।
স্বর্গের সাজানো বাগানে পদস্পর্শে জ্বলে গেছি দূরে, তারপর
পেয়েছি বিশ্রাম । আজ রাত সম্পর্কের ভিতরে এসেছি ।

সবাই মিলবে এসে মৌন-মিহি শিল্পে অতঃপর,
তোমার প্রদত্ত দানে পূর্ণ হবে পৃথিবী আমার ।

নির্মলেন্দু গুণ
লিখেছেন

নির্মলেন্দু গুণ

নির্মলেন্দু গুণ, একজন বাংলাদেশী কবি, গীতিকার, সাংবাদিক এবং চিত্রশিল্পী। তিনি ১৯৪৫ সালের ২১ জুন নেত্রকোনার বারহাট্টায় জন্মগ্রহণ করেন।

গুণ ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি সাংবাদিকতায় তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং দৈনিক ইত্তেফাক ও দৈনিক বাংলা পত্রিকায় কাজ করেন। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখেন।

গুণ একজন প্রতিভাবান কবি এবং তার কবিতা বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। তার কবিতায় নারীপ্রেম, শ্রেণীসংগ্রাম এবং স্বৈরাচার বিরোধিতা প্রভৃতি বিষয়বস্তু প্রাধান্য পায়। তার উল্লেখযোগ্য কবিতার মধ্যে রয়েছে “হুলিয়া”, “মানুষ”, “আফ্রিকার প্রেমের কবিতা”, “একটি অসমাপ্ত কবিতা” ইত্যাদি।

গুণ একজন জনপ্রিয় গীতিকারও। তিনি অনেক জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের গান রচনা করেছেন। তার রচিত গানগুলির মধ্যে রয়েছে “ওরে সোনা রোদ্দুর”, “ওরে নীল দরিয়া”, “আমি তোমার প্রেমে বলব না” ইত্যাদি।

গুণ তার সাহিত্যকর্মের জন্য অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ গীতিকার) লাভ করেন। তিনি ১৯৯৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

গুণ একজন সমাজসেবক ব্যক্তিও। তিনি অনেক সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন। তিনি বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতির বিকাশে বিশেষ অবদান রেখেছেন।

মন্তব্য করুন