দ্রোহের প্রান্তর

1
0

দৃশ্যকল্প ১:-
আজ ১০আগষ্ট ২০২৪। আমি সেই জায়গায় বসে আছি ,যেখানে বসে একটা সময় আমরা কত গল্প-স্বল্প করতাম, কত হাসি আর কান্নার মিলন হতো এই জায়গায়, কত আবেগ ও না জানা কথার মনোস্তাত্তিক বিনিময় হতো যে আসরে।
সেই আসরে আজ আমি শূণ্য হয়ে পড়ে আছি। প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে তোমার উপস্থিতি আমি টের পাচ্ছি। কিছুই করার নাই, অতিরিক্ত হাসি কোনো অবস্থাতেই ভালো না, তা দুঃখের আলামত।
আমি যে প্রান্তরে বসে আছি, হয়তো অন্য কারো জন্য তুমি এই প্রান্তরে বসে লাল চাদরে আবৃত হয়ে সাজবে, কারো আঁধার জীবনের আলোর দিশারী হবে।
এই নিস্তব্ধ নগরীতে প্রাণের সঞ্চার হবে, মৃত সব অবকাঠামো আবার প্রাণবন্ত হবে। সব‌ই হবে শুধু আমিই থাকবো না। যেখানেই যাও সৃষ্টির সকল কল্যান আল্লাহ তোমাকে দান করুন। এটাই কামনা।

দৃশ্যকল্প ২:-

আরেকটা দ্রোহের প্রান্তরে এসে বসলাম, যেখানে বসলে এক অন্যরকম অনুভুতি আসে মনের মধ্যে, বাতাসের শো শো আওয়াজ, পানির উত্তাল ঢেউ, দৃষ্টিনন্দন গাছপালা ও বিস্তৃত খোলা উদ্যান, এক অন্যরকম অনুভুতি জোগায় মনের মধ্যে, এই জায়গার আসল সৌন্দর্য সবচেয়ে বেশি উপভোগ করা যায়, বিকেলে কিংবা তীব্র তাপদাহের পর আকাশ যখন ঘন কালো মেঘে ছেয়ে যায়। ছোট ছোট বৃষ্টির ফোঁটা যেনো তার কোমল হাতের স্পর্শ। আমার খুব মনে পড়ছে ১৫জুলাই বিকেলের কথা। তার কাছে ডং করে একটা অভিযোগ করেছিলাম সে এটা গিয়ে ওর মায়ের কাছে বলে দেয়, উফফফ! আমি তো লজ্জায় শেষ। লজ্জাটা কি করে যে লুকিয়ে রাখি, তাই এসে বসলাম এই পলাশের প্রান্তরে।এতো কাছে থাকার পরেও আমার মোবাইলে বেজে উঠে তার মায়ের ফোন, আসো বাবা একটু আমার বাচ্চাটার পাশে এসে বসো, আমি একটু চা জাল দিয়ে তোমাকে দিই। লজ্জায় আমার চোখ মাটিতে। ঠিক আছে, বলে আমি চললাম তার গন্তব্যে।
বিকেলের একটা সুন্দর সমাপ্তি ঘটলো। সেদিনের মতো এক‌ই বিকেল আজ দৃষ্টির সামনে, সবকিছুকেই আগের মতো অনুভব করতে পারছি, শুধু তুমি নামক প্রানীটার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম না। কি যে করি, ফের ওই দূর সীমান্তের পাহাড়টার দিকে তাকিয়ে থেকে তোমাকে খুঁজতে থাকি।

আজ ১০ আগষ্ট ২০২৪ প্রায় ২৫ দিনের ব্যাবধানে আমরা এতো দূরবর্তী হয়ে গেলাম একে অন্যের। তোমার স্মৃতিগুলো অক্ষত রয়ে গেছে। শুধু তুমিই কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেলে প্রিয়।
জানি না ফের কবে দেখা হবে পলাশীর এই স্বপ্নের প্রান্তরে।

দৃশ্যপট ৩:-
পলাশের স্বপ্নের প্রান্ত থেকে ফিরে আসি ১৯জুলাই। তারপর সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই তাহার থেকে, খুব মনে পড়ে তার কথা। কবিতা লিখি, গল্প লিখি, রবীন্দ্র মোহ শুনি। ক‌ই তাহার শূন্যতার তীব্রতা আর মেটানো যায় না। এভাবেই দিন গেলো রাত এলো, রাত গিয়ে দিন এলো, তাহার দেখা আর মিলিলো না। একটা দিনের সূচনা টা অনেক শুভ ছিলো। সে আসবে আমাদের আঙিনায়। তাহার জন্য রাজকীয় সব আয়োজন, দ্যাত, মুহুর্তেই একটি খারাপ খবর শুনতে হয়, তারা আসবে না। আঙিনায় আলোয় আলোকিত হ‌ওয়া সূর্য শায়িত হলো তার রবের কদমে। সৃষ্টিকর্তার পা থেকে উঠে সে আবার নতুন দিগন্তের সূচনা করলো, ঘোষনা আসলো, পলাশের প্রান্তরের যোদ্ধারা বিজয়ের আঙিনায় আস্তানা গারবেন। হৃদয় দিয়ে আলাদা একটা প্রশান্তি অনুভব করলাম। আমি তাহার অপেক্ষা করতে থাকলাম, ক‌ই সে আর আসে না। বেলা তখন ১২:৩০ এর দিকে তাদের রনযাত্রা অবতরণ করলো বিজয়ের আঙিনায়। কালো মুখুশে আবৃত আমার গল্পের মহারানীকে অস্বাধারন লাগছিলো, তা বলে বোঝানোর মতো না। তাকে সাধুবাদ জানিয়ে, আমি রাজপ্রাসাদে ঢুকার জন্য আহব্বান করলাম, রনযাত্রার বীর যোদ্ধারা অস্ত্র-ঢালসহ সম্মুখে অগ্রসর হতে লাগলেন। সবাই বিজয়ের আঙিনায় প্রবেশ করলেন।
সবার সাথে করমর্দন ও সাক্ষাতের পর সবাই নিজ নিজ আসনে সমাসীন হয়ে বিলীন হয়ে গেলো কোনো এক নীরব নিবৃত শুরায়।

মন্তব্য করুন