কবিতার ভাসান আমার

127
0

এইখানে এইখানে – আহা খুব যত্নে রাখো লাশ
শোকসভা আয়োজনে পবিত্রতা বড় প্রয়োজন
তা ছাড়াও এ তো নয় যে কোনো লাবণ্যময়ী — যেন তেন জন
অন্তত নিজেকে দেখে এ আমার একান্ত বিশ্বাস
ঈশ্বরের ইচ্ছে থেকে শুরু করে অধম নশ্বর
এই আমি – ওর সাথে সৃষ্টির আনন্দে সহবাস
করেছি বিদগ্ধ হয়ে — ওর ওষ্ঠ পীন পয়োধর
পদ্মরাগ ত্রিবেণীও পূর্ণ কামে অমূর্ত থাকেনি
আবার কখনো ওকে গড়েছে আমার তীক্ষ্ণ ছেনি
আমারই আরাধ্য করে — আমি তার দাস অনুদাস
চেয়ে চেয়ে সম্মোহিত হয়ে আমি পরম বিষ্ময়ে
পড়েছি রহস্যময় ওর দুটি চোখের কুয়াশা
মরাল গ্রীবার ভঙ্গি – হাসির বিদ্যুৎবাহী ভাষা
বাহুর পেলবতায় বাঁধা পড়ে নানা ছন্দে লয়ে
রমণ-রঙ্গের স্রোতে দ্রুততর করেছি নিঃশ্বাস

আহা খুব যত্নে রাখো – ও কী – ও কী দেখোতো দেখোতো
কী ভীষণ হট্টগোল করে আসে ভাগাড়ের শিয়াল-শকুন
কে ওদের শেখবে যে এ সময় নীরবতা পালনের রীতি —
তালহীন ছন্দলয় মাত্রাজ্ঞানহীন এই অপগণ্ডদের
বহুকাল ধরে ক্ষিপ্ত দংশনেই মৃত এই মহামান্যা আজ
উচ্চকিত বাদ্য তবু বাজাতে এসেছে ওরা লাশের কঙ্কালে —
এমত অবস্থা তাই শোকসভা বাতিল — রহিত

আহা খুব যত্নে রাখো লাশ এই নদীটার পাড়ে
শিয়ালেরা শকুনেরা ফিরে যাক পৃথিবীর ভাগাড়ে ভাগাড়ে
এ নদী আমার বুক – মৃত্যুপুরী অভিমুখী শোকাতুর নদী
এখানে ভাসান হবে উপদংশে মৃত কবিতার
বিপরীত যাত্রা করে পাড়ি দিয়ে মরণের অন্ধকার দ্বার
ঈশ্বরের সভাকক্ষে আলো জ্বেলে হবো আমি সাঁইজী দরদী
আবার জাগিয়ে দেব অমরায় ঐশ্বরিক মীন
তিনের জোয়ারে — আর এবার সে হবে মৃত্যুহীন ।

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
লিখেছেন

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান একজন বাংলাদেশী গীতিকার, চলচ্চিত্রকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা এবং লেখক। তিনি ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ বেতারে গীতিকার হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৭৩ সালে চলচ্চিত্রের জন্য গীত রচনা শুরু করেন।

রফিকউজ্জামানের লেখা গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

* "সেই রেললাইনের ধারে মেঠোপথটার পারে দাঁড়িয়ে" (গান: নীল আকাশের নীচে, চলচ্চিত্র: নীল আকাশের নীচে, ১৯৭৩)
* "ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়" (গান: ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়, চলচ্চিত্র: ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়, ১৯৭৭)
* "দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক" (গান: দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক, চলচ্চিত্র: দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক, ১৯৭৯)
* "কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল" (গান: কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল, চলচ্চিত্র: কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল, ১৯৮২)
* "যদি মরনের পরে কেউ প্রশ্ন করে" (গান: যদি মরনের পরে কেউ প্রশ্ন করে, চলচ্চিত্র: যদি মরনের পরে কেউ প্রশ্ন করে, ১৯৮৩)
* "আমার মন পাখিটা যা রে উড়ে যায়" (গান: আমার মন পাখিটা যা রে উড়ে যায়, চলচ্চিত্র: আমার মন পাখিটা যা রে উড়ে যায়, ১৯৮৫)
* "আমার বাউল মনের একতারাটা" (গান: আমার বাউল মনের একতারাটা, চলচ্চিত্র: আমার বাউল মনের একতারাটা, ১৯৮৬)
* "চির অক্ষয় তুমি বাংলাদেশ" (গান: চির অক্ষয় তুমি বাংলাদেশ, চলচ্চিত্র: চির অক্ষয় তুমি বাংলাদেশ, ১৯৯১)

রফিকউজ্জামান তার গানের জন্য অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি ১৯৮৪ ও ১৯৮৬ সালে শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে এবং ২০০৮ সালে শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি রাষ্ট্রপতি পদক, একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

রফিকউজ্জামানের লেখা গান বাংলা গানের ইতিহাসে এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। তার গান বাংলা সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি বাংলা গানের একজন কিংবদন্তি গীতিকার।

মন্তব্য করুন