অভিযোগ

70
0

শোনো হে বিশ্বকবি —
তোমার কলম তুলির আঁচোড়ে কোনোদিন তুমি আঁকনি যাদের ছবি
যে চাষির ঘামে হয়েছে তোমার অন্ন সংস্থান
যে মজুর গড়ে দিয়েছে তোমার রম্য বাসস্থান
যে শ্রমিক গড়ে শহর নগর পথ-ঘাট প্রতিদিন
হিসেব করেছো তাদের কাছেই তোমার কতোটা ঋণ ?।

যে তাঁতিটি বসে বুনছে কাপড়, যে জেলেটি মাছ ধরে
কোনোদিন তুমি যাওনি তাদের জীর্ণ মলিন ঘরে
কুমোর কামার সুতার কাউকে কখনো ডাকোনি পাশে
বসতে পারোনি পথের ধুলায় অথবা আলের ঘাসে
ভাই বলে তুমি ডাকোনি কাউকে যারা বড়ো দীন-হীন ।।

কান পেতে আছো শুনতে সে কার, সে কোন কবির বাণী
হৃদয়ে তোমার বেজেছে কি কোনো পরাধীনতার গ্লানি ?
কতো বিদ্রোহ কতো প্রাণ দান কতো রক্তের খেলা
না দেখেই বলো কাটলো কী করে তোমার জীবনবেলা ?
বিলেতি বুলেটে মৃত্যু দেখোনি – দেখোনি কি সংগিন ?।

ভারত পাকিস্তান পাড়ি দিয়ে খুনেরাঙা বীর হয়ে
আমরা তো এক গর্বিত জাতি স্বাধীন পতাকা বয়ে
তিরিশ লক্ষ শহীদি রক্তে লেখা কবিতাটা পড়ো
এই বাণীটাই সে কবির বাণী, যে সবার চেয়ে বড়
তোমার বাণীও পতাকার সাথে রেখেছে সে উড্ডীন।

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
লিখেছেন

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান একজন বাংলাদেশী গীতিকার, চলচ্চিত্রকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা এবং লেখক। তিনি ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ বেতারে গীতিকার হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৭৩ সালে চলচ্চিত্রের জন্য গীত রচনা শুরু করেন।

রফিকউজ্জামানের লেখা গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

* "সেই রেললাইনের ধারে মেঠোপথটার পারে দাঁড়িয়ে" (গান: নীল আকাশের নীচে, চলচ্চিত্র: নীল আকাশের নীচে, ১৯৭৩)
* "ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়" (গান: ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়, চলচ্চিত্র: ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়, ১৯৭৭)
* "দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক" (গান: দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক, চলচ্চিত্র: দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক, ১৯৭৯)
* "কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল" (গান: কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল, চলচ্চিত্র: কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল, ১৯৮২)
* "যদি মরনের পরে কেউ প্রশ্ন করে" (গান: যদি মরনের পরে কেউ প্রশ্ন করে, চলচ্চিত্র: যদি মরনের পরে কেউ প্রশ্ন করে, ১৯৮৩)
* "আমার মন পাখিটা যা রে উড়ে যায়" (গান: আমার মন পাখিটা যা রে উড়ে যায়, চলচ্চিত্র: আমার মন পাখিটা যা রে উড়ে যায়, ১৯৮৫)
* "আমার বাউল মনের একতারাটা" (গান: আমার বাউল মনের একতারাটা, চলচ্চিত্র: আমার বাউল মনের একতারাটা, ১৯৮৬)
* "চির অক্ষয় তুমি বাংলাদেশ" (গান: চির অক্ষয় তুমি বাংলাদেশ, চলচ্চিত্র: চির অক্ষয় তুমি বাংলাদেশ, ১৯৯১)

রফিকউজ্জামান তার গানের জন্য অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি ১৯৮৪ ও ১৯৮৬ সালে শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে এবং ২০০৮ সালে শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি রাষ্ট্রপতি পদক, একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

রফিকউজ্জামানের লেখা গান বাংলা গানের ইতিহাসে এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। তার গান বাংলা সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি বাংলা গানের একজন কিংবদন্তি গীতিকার।

মন্তব্য করুন