আমরণ দণ্ডিত আসামী

29
0

মাঝে মাঝে ভুলে যাই আমি এক আমরণ কারাদণ্ডে দণ্ডিত আসামী
আমার জবানবন্দী মুছে গেছে সময়ের খেরো খাতা থেকে
হঠাৎ উচ্ছাস এসে নিয়ে যেতে চায় কোন বহুদূরগামী
নবীন জাহাজে তুলে, তখনি তো শিকলের আর্তনাদ বলে পিছু ডেকে
মুক্তি নেই মুক্তি নেই, তুমি সেই পুণ্য-শূন্য ঘৃণ্য অপরাধী
জীবন কৃপাণ মেলে ঘোষণা দিয়েছে যাকে- জীবন-বিবাদী

গরাদের ফাঁক দিয়ে কী কারণে বাহিরে তাকাই আমি নিজেই জানি না
ওখানে আমার জন্যে নেই কোনো ফল্গুধারা হিমেল বাতাস
তাসের বান্ডিল থেকে ফেলে দেয়া জোকারের মতো এক তাস
নাকের ডগায় লাল বল সেঁটে হাসাতে গিয়েও শুধু ঘৃণা
কুড়াই দু’হাত ভরে — মরে যায় সবুজেরা আমার পাপিষ্ঠ দৃষ্টিপাতে
না আমার বৃক্ষ নেই ছায়া নেই — এ কথাও জানি না, কখনো
স্বাভাবিক মৃত্যু ছুঁয়ে সুখী হবো, এমন বাসনা নিয়ে কোনো
স্বপ্ন ছিলো কি না বুকে, অন্ধকার ছিলো কি-না কোনো কোনো রাতে
ঘুমিয়ে পড়ার মতো – কিম্বা জেগে ওঠার সকাল —
এখন কেবলি ক্ষণ গুণে গুণে দ্রুত হাতে পেতে চাই অন্তের নাগাল

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
লিখেছেন

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান একজন বাংলাদেশী গীতিকার, চলচ্চিত্রকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা এবং লেখক। তিনি ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ বেতারে গীতিকার হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৭৩ সালে চলচ্চিত্রের জন্য গীত রচনা শুরু করেন।

রফিকউজ্জামানের লেখা গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

* "সেই রেললাইনের ধারে মেঠোপথটার পারে দাঁড়িয়ে" (গান: নীল আকাশের নীচে, চলচ্চিত্র: নীল আকাশের নীচে, ১৯৭৩)
* "ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়" (গান: ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়, চলচ্চিত্র: ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়, ১৯৭৭)
* "দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক" (গান: দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক, চলচ্চিত্র: দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক, ১৯৭৯)
* "কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল" (গান: কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল, চলচ্চিত্র: কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল, ১৯৮২)
* "যদি মরনের পরে কেউ প্রশ্ন করে" (গান: যদি মরনের পরে কেউ প্রশ্ন করে, চলচ্চিত্র: যদি মরনের পরে কেউ প্রশ্ন করে, ১৯৮৩)
* "আমার মন পাখিটা যা রে উড়ে যায়" (গান: আমার মন পাখিটা যা রে উড়ে যায়, চলচ্চিত্র: আমার মন পাখিটা যা রে উড়ে যায়, ১৯৮৫)
* "আমার বাউল মনের একতারাটা" (গান: আমার বাউল মনের একতারাটা, চলচ্চিত্র: আমার বাউল মনের একতারাটা, ১৯৮৬)
* "চির অক্ষয় তুমি বাংলাদেশ" (গান: চির অক্ষয় তুমি বাংলাদেশ, চলচ্চিত্র: চির অক্ষয় তুমি বাংলাদেশ, ১৯৯১)

রফিকউজ্জামান তার গানের জন্য অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি ১৯৮৪ ও ১৯৮৬ সালে শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে এবং ২০০৮ সালে শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি রাষ্ট্রপতি পদক, একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

রফিকউজ্জামানের লেখা গান বাংলা গানের ইতিহাসে এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। তার গান বাংলা সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি বাংলা গানের একজন কিংবদন্তি গীতিকার।

মন্তব্য করুন