আত্ম-অস্ত্রাগার

137
0

মাথার উপরে এক শয়তানের কু-বিশাল ছায়া।।
কুচক্রী চক্রের দশা হয়ে মেলে আছে তার মহাজনী খাতা।।
আমি এই দৃশ্য থেকে মুক্তি চাই, এই সব কুমন্ত্রের মায়া।।
ছিন্ন করে হতে চাই অদৃষ্টের আপন বিধাতা।।
অথচ ছায়ার সাথে যুদ্ধ করা যায় না কখনো।।
ছায়াধারীকেই তাই প্রত্যহ সন্ধান করি আমি।।
নিজেকে কঠিন স্বরে বলি, অস্তিত্বের বীজ বোনো।।
নিজের গভীরে আর নিজে আঁকো নিজের আগামী।।
যদিও জেনেছি সব শয়তানেরা জন্ম দেয় অপচ্ছায়াজালে।।
এমন কুটিল স্বত্বা যার পরে ভর করা যায়।।
ছায়াধারী নিজে বসে সেই সব স্বত্বার আড়ালে।।
নিজের নামের ঢোল নানা ছন্দে স্বহ স্তে বাজায়।।
আমি তাই অবিরাম ঘুরিয়ে তুলির তলোয়ার।।
সূর্যের ধারালো রশ্মি দিয়ে আঁকি অজেয়-জীবন।।
অপচ্ছায়া ছিন্ন করা সেই অস্ত্রে ভরি অস্ত্রাগার।।
কেবল মানুষ জানে মানুষেরা আনে শুভক্ষণ।।
কেবল মানুষ পারে অপচ্ছায়া পাড়ি দিতে ফের।।
অজেয়-জীবন সেই মানুষেরা পারে তীক্ষ্ণ ধারালো রশ্মিতে।।
পুড়িয়ে কুটিল স্বত্বা মুখোমুখি হয়ে শয়তানের।।
তাকেও নিহত করে কুচক্রীর চক্র ভেঙে প্রতিশোধ নিতে।।
মানুষের অস্ত্রাগার অস্তিত্বের মহীরুহ সাজাবে এখানে।।
মধ্যাহ্নে শীতল ছায়া কী হয় তা বটবৃক্ষ জানে।।

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
লিখেছেন

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান একজন বাংলাদেশী গীতিকার, চলচ্চিত্রকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা এবং লেখক। তিনি ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ বেতারে গীতিকার হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৭৩ সালে চলচ্চিত্রের জন্য গীত রচনা শুরু করেন।

রফিকউজ্জামানের লেখা গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

* "সেই রেললাইনের ধারে মেঠোপথটার পারে দাঁড়িয়ে" (গান: নীল আকাশের নীচে, চলচ্চিত্র: নীল আকাশের নীচে, ১৯৭৩)
* "ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়" (গান: ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়, চলচ্চিত্র: ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়, ১৯৭৭)
* "দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক" (গান: দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক, চলচ্চিত্র: দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক, ১৯৭৯)
* "কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল" (গান: কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল, চলচ্চিত্র: কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল, ১৯৮২)
* "যদি মরনের পরে কেউ প্রশ্ন করে" (গান: যদি মরনের পরে কেউ প্রশ্ন করে, চলচ্চিত্র: যদি মরনের পরে কেউ প্রশ্ন করে, ১৯৮৩)
* "আমার মন পাখিটা যা রে উড়ে যায়" (গান: আমার মন পাখিটা যা রে উড়ে যায়, চলচ্চিত্র: আমার মন পাখিটা যা রে উড়ে যায়, ১৯৮৫)
* "আমার বাউল মনের একতারাটা" (গান: আমার বাউল মনের একতারাটা, চলচ্চিত্র: আমার বাউল মনের একতারাটা, ১৯৮৬)
* "চির অক্ষয় তুমি বাংলাদেশ" (গান: চির অক্ষয় তুমি বাংলাদেশ, চলচ্চিত্র: চির অক্ষয় তুমি বাংলাদেশ, ১৯৯১)

রফিকউজ্জামান তার গানের জন্য অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি ১৯৮৪ ও ১৯৮৬ সালে শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে এবং ২০০৮ সালে শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি রাষ্ট্রপতি পদক, একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

রফিকউজ্জামানের লেখা গান বাংলা গানের ইতিহাসে এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। তার গান বাংলা সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি বাংলা গানের একজন কিংবদন্তি গীতিকার।

মন্তব্য করুন