ডেকে আন্

92
0

পথ ভুলে গিয়াছিল, আবার এসেছে ফিরে,
দাঁড়ায়ে রয়েছে দূরে, লাজে ভয়ে নত শিরে ;
সম্মুখে চলে না পদ, তুলিতে পারে না আঁখি,
কছে গিয়ে, হাত ধরে, ওরে তারে আন্ ডাকি।

ফিরস্ নে মুখ আজ নীরব ধিক্কার করি,
আজি আন্ স্নেহ-সুধা লোচন বচন ভরি।
অতীতে বরষি ঘৃণা কিবা আর হবে ফল?
আঁধার ভবিষ্য ভাবি, হাত ধরে লয়ে চল্।

স্নেহের অভাবে পাছে এই লজ্জানত প্রাণ
সঙ্কোচ হারায়ে ফেলে—আন্ ওরে ডেকে আন্!
আসিয়াছে ধরা দিতে, শত স্নেহ-বাহু-পাশে
বেঁধে ফেল্ ; আজ গেলে আর যদি না-ই আসে ।

দিনেকের অবহেলা, দিনেকের ঘৃণাক্রোধ,
একটি জীবন তোরা হারাবি জীবন-শোধ ।
তোরা কি জীবন দিবি? উপেক্ষা যে বিষবাণ,
দুঃখ-ভরা ক্ষমা লয়ে, আন্, ওরে ডেকে আন্।

কামিনী রায়
লিখেছেন

কামিনী রায়

কামিনী রায় একজন প্রথিতযশা বাঙালি মহিলা কবি, সমাজকর্মী এবং নারীবাদী লেখিকা। তিনি ব্রিটিশ ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক ছিলেন। তার জন্ম ১৮৬৪ সালের ১২ অক্টোবর বাকেরগঞ্জের বাসন্ডা গ্রামে। তার বাবা চণ্ডীচরণ সেন ছিলেন একজন ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখক ও পেশায় বিচারক।

কামিনী রায় মাত্র আট বছর বয়স থেকে কবিতা লেখা শুরু করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "আলো ও ছায়া" প্রকাশিত হয় ১৮৮৯ সালে। এরপর তিনি আরও বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল "নির্মালী" (১৮৯১), "পৌরাণিকী" (১৮৯৭), "গুঞ্জন" (১৯০৫), "মাল্য ও নির্মাল্য" (১৯১৩), "অশোকসঙ্গীত" (১৯১৪), "অম্বা" (১৯১৫), "বালিকা শিক্ষার আদর্শ" (১৯১৮), "ঠাকুরমার চিঠি" (১৯২৪), "দীপ ও ধূপ" (১৯২৯), "জীবনপথে" (১৯৩০)।

কামিনী রায়ের কবিতাগুলি প্রকৃতি, প্রেম, মানবতা ও নারী অধিকারের বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করে রচিত। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাবাধীন হলেও তার কবিতায় নিজস্ব স্বতন্ত্রতা লক্ষ্য করা যায়। তার কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য, নারীর প্রেম ও ভালোবাসা, মানবতার মর্যাদা ও নারীর অধিকারের দাবি উঠে এসেছে।

কামিনী রায় নারীশিক্ষার একজন প্রবক্তা ছিলেন। তিনি নারীদের শিক্ষা ও কর্মজীবনে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতেন। তিনি নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যও আন্দোলন করেছিলেন।

কামিনী রায় ১৯৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হাজারিবাগ জেলায় মৃত্যুবরণ করেন।

কামিনী রায়ের অবদানের জন্য তিনি বাংলা সাহিত্যে এক অমর স্থান অধিকার করে আছেন। তিনি একজন প্রকৃত প্রতিভাসম্পন্ন কবি, সমাজকর্মী ও নারীবাদী লেখিকা হিসেবে পরিচিত।

মন্তব্য করুন