সাহিত্য রস

সবচেয়ে বড় কবিতা, গল্প, ছন্দ এবং গান প্রকাশের ওয়েবসাইট

চন্দ্রাপীড়ের জাগরণ

1
0

অন্ধকার মরণের ছায়
কতকাল প্রণয়ী ঘুমায়?—
চন্দ্রাপীড়, জাগ এইবার।
বসন্তের বেলা চলে যায়,
বিহগেরা সান্ধ্যগীত গায়,
প্রিয়া তবু মুছে অশ্রুধার।
মাস, বর্ষ হ’ল অবসান,
আশা-বাঁধা ভগ্ন পরাণ
নয়নেরে করেছে শাসন,
কোনদিন ফেলি অশ্রুজল,
করিবে না প্রিয়-অমঙ্গল—
এই তার আছিল যে পণ।
আজি ফুল মলয়জ দিয়া,
শুভ্র-দেহা, শুভ্রতর দিয়া,
পূজিয়াছে প্রণয়ের দেবে ;
নবীভূত আশারাশি তার,
অশ্রুমালা শোনে নাকো আর—
চন্দ্রাপীড়, মেল আঁখি এবে।
দেখ চেয়ে, সিক্তোত্পল দুটি
তোমা পানে রহিয়াছে ফুটি,
যেন সেই নেত্র-পথ দিয়া,
জীবন, তেয়াগি নিজকায়,
তোমারি অন্তরে যেতে চায়—
তাই হোক্, উঠ গো বাঁচিয়া।
প্রণয় সে আত্মার চেতন,
জীবনের জনম নূতন,
মরণের মরণ সেথায়।
চন্দ্রাপীড়, ঘুমা’ও না আর—
কানে কানে কে কহিল কার,
আঁখি মেলি চন্দ্রাপীড় চায়।
মৃত্যু-মোহ অই ভেঙ্গে যায়,
স্বপ্ন তার চেতনে মিশায়,
চারি নেত্র শুভ দরশন
একদৃষ্টে কাদম্বরী চায়,
নিমেষ ফেলিতে ভয় পায়—
“এতো স্বপ্ন—নহে জাগরণ।”
নয়ন ফিরাতে ভয় পায়,
এ স্বপন পাছে ভেঙ্গে যায়,
প্রাণ যেন ওঠে উথলিয়া।
আঁখি দুটি মুখ চেয়ে থাক্,
জীবন স্বপন হয়ে যাক্,
অতীতের বেদনা ভুলিয়া।
“আধেক স্বপনে, প্রিয়ে,
কাটিয়া গিয়াছে নিশি,
মধুর আধেক আর
জাগরণে আছে মিশি ;”
“মরণে অবসানে
জীবন জনম প্রায়।”
“জীবন?—জীবন, প্রিয়?
নহি স্বপনের মোহ?
মরণের কোন্ তীরে
অবতীর্ণ আজ দোঁহে?”

কামিনী রায়
WRITTEN BY

কামিনী রায়

কামিনী রায় একজন প্রথিতযশা বাঙালি মহিলা কবি, সমাজকর্মী এবং নারীবাদী লেখিকা। তিনি ব্রিটিশ ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক ছিলেন। তার জন্ম ১৮৬৪ সালের ১২ অক্টোবর বাকেরগঞ্জের বাসন্ডা গ্রামে। তার বাবা চণ্ডীচরণ সেন ছিলেন একজন ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখক ও পেশায় বিচারক।

কামিনী রায় মাত্র আট বছর বয়স থেকে কবিতা লেখা শুরু করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "আলো ও ছায়া" প্রকাশিত হয় ১৮৮৯ সালে। এরপর তিনি আরও বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল "নির্মালী" (১৮৯১), "পৌরাণিকী" (১৮৯৭), "গুঞ্জন" (১৯০৫), "মাল্য ও নির্মাল্য" (১৯১৩), "অশোকসঙ্গীত" (১৯১৪), "অম্বা" (১৯১৫), "বালিকা শিক্ষার আদর্শ" (১৯১৮), "ঠাকুরমার চিঠি" (১৯২৪), "দীপ ও ধূপ" (১৯২৯), "জীবনপথে" (১৯৩০)।

কামিনী রায়ের কবিতাগুলি প্রকৃতি, প্রেম, মানবতা ও নারী অধিকারের বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করে রচিত। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাবাধীন হলেও তার কবিতায় নিজস্ব স্বতন্ত্রতা লক্ষ্য করা যায়। তার কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য, নারীর প্রেম ও ভালোবাসা, মানবতার মর্যাদা ও নারীর অধিকারের দাবি উঠে এসেছে।

কামিনী রায় নারীশিক্ষার একজন প্রবক্তা ছিলেন। তিনি নারীদের শিক্ষা ও কর্মজীবনে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতেন। তিনি নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যও আন্দোলন করেছিলেন।

কামিনী রায় ১৯৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হাজারিবাগ জেলায় মৃত্যুবরণ করেন।

কামিনী রায়ের অবদানের জন্য তিনি বাংলা সাহিত্যে এক অমর স্থান অধিকার করে আছেন। তিনি একজন প্রকৃত প্রতিভাসম্পন্ন কবি, সমাজকর্মী ও নারীবাদী লেখিকা হিসেবে পরিচিত।

মন্তব্য করুন