সন্ধ্যা হয়ে আসে

120
0

সন্ধ্যা হয়ে আসে- সন্ধ্যা হয়ে আসে
একা একা মাঠের বাতাসে
ঘুরি আমি- বসি আমি ঘাসে

ওই দূরে দেখা যায় কার লাল পাড়
প্রসাদের বউ বুঝি-পাশে বুঝি তার
প্রসাদ রয়েছে বসে-বাড়িতেছে সন্ধ্যার আঁধার

বছর আরেক হ’ল হয়েছিলো দু’জনের বিয়ে
মনে পড়ে; তারপর কুড়িয়ে-বাড়িয়ে
আজো তারা যায় নি হারিয়ে

রোজই তারা সন্ধ্যা হলে আসে
এই মাঠে-বসে থাকে ঘাসে
লক্ষ লক্ষ তারার আকাশে
বসে থাকে-মনে হয়
মাঠের চাঁদের কথা কয়
দুজনার প্রাণে ঢের শান্তি ও বিস্ময়

আছে আমি জানি
এরা দুটি পৃথিবীর আঁচলের প্রাণী
মনে কোনো প্রশ্ন নাই-দ্বিধা নাই জানি

প্রাণের আশ্চর্য টান আছে
চিরদিন থাকে কাছে কাছে
বিচ্ছেদে বিনষ্ট হয় পাছে

জীবনের শান্ত গল্প- প্রসাদ কখনো তাই
বড় বেশি তীর্থে যায় নাই
যদি তারে এ কথা শুধাই

মৃত্যুরেও দেবে নাকি ফাঁকি?
কিন্তু থাক চেয়ে দেখ যেন দুটি পাখি
বসে আছে-পাখনায় শান্ত পাখা ঢাকি

নক্ষত্রও চেয়ে দেখে সব
এমন নিবিড় স্নিগ্ধ-এমন নীরব
ভালোবাসাঃ মাটিতেও নয় অসম্ভব?

এই তারা বলে
নীল লাল আলো নিয়ে জ্বলে
চেয়ে দেখে আকাশের তলে

রক্তে রক্তে ভ’রে আছে মানুষের মন
রোম নষ্ট হয়ে গেছে…গেছে বেবিলন
পৃথিবীর সব গল্প কীটের মতন

একদিন ভেঙে যাবে: হয়ে যাবে ধুলো আর ছাই
রোম নাই আজ আর- বেবিলন নাই
আজো তবু হৃদয়ের হৃদয়কে চাই।

জীবনানন্দ দাশ
লিখেছেন

জীবনানন্দ দাশ

জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। তার কবিতায় পরাবাস্তবের দেখা মেলে। জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী।

জীবনানন্দ দাশের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:

* ঝরাপালক (১৯২৭)
* ধূসর পান্ডুলিপি (১৯৩৬)
* বনলতা সেন (১৯৪২)
* গীতি কবিতার গল্প (১৯৪৮)
* রূপসী বাংলা (১৯৫২)

জীবনানন্দ দাশের কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রেম, বিরহ, জীবনের অনিশ্চয়তা, মৃত্যু, একাকীত্ব, উদ্বেগ, আশা, নিরাশা, স্বপ্ন, বাস্তবতা, ইত্যাদি নানামুখী বিষয়ের চিত্রায়ণ দেখা যায়। তার কবিতায় রয়েছে স্বতন্ত্র কবিতার ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বাংলা কাব্যে আধুনিকতার নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটে।

জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্পের মধ্যে রয়েছে:

* কালবেলায় (১৯৫১)
* জীবিত ও মৃত (১৯৫২)

জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্পে প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রেম, বিরহ, জীবনের অনিশ্চয়তা, মৃত্যু, একাকীত্ব, উদ্বেগ, আশা, নিরাশা, স্বপ্ন, বাস্তবতা, ইত্যাদি নানামুখী বিষয়ের চিত্রায়ণ দেখা যায়। তার ছোটগল্পে রয়েছে স্বতন্ত্র গল্পের ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি। জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্প বাংলা সাহিত্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধের মধ্যে রয়েছে:

* কবিতার কথা (১৯৪২)
* সাহিত্য কথা (১৯৫২)

জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধে সাহিত্যের স্বরূপ, কবিতার বিষয়বস্তু, ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি বিষয়ে তার নিজস্ব চিন্তাভাবনার প্রকাশ ঘটেছে। তার প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা করেছে।

জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে এক অমূল্য সম্পদ। তার সাহিত্যকর্ম বাঙালির আবেগ, অনুভূতি, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতিফলন। তার সাহিত্যকর্ম পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যকর্মের গুরুত্ব নিয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন যে, তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, তিনি বাংলা কাব্যে নৈরাজ্যের স্রষ্টা। তবে, এ কথা অনস্বীকার্য যে, জীবনানন্দ দাশ বাংলা কাব্যে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছেন।

মন্তব্য করুন