ভাষিত

94
0

আমার এ-জীবনের ভোরবেলা থেকে-
সে-সব ভূখণ্ড ছিলো চিরদিন কন্ঠস্থ আমার;
একদিন অবশেষে টের পাওয়া গেল
আমাদের স’জনার মতো দাঁড়াবার

তিল ধারণের স্থান তাহাদের বুকে
আমাদের পরিচিত পৃথিবীতে নেই।
একদিন দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের সাথে পথ ধ’রে
ফিরে এসে বাংলার পথে দাঁড়াতেই

দেকগা গেল পথে আছে,- ভোরবেলা ছড়ায়ে রয়েছে,-
দক্ষিণ, পশ্চিম, পূর্ব, উত্তরের দিক
একটি কৃষাণ এসে বার-বার আমাকে চেনায়;
আমার হৃদয় তবু অস্বাভাবিক।

পরিচয় নেই তার,- পরিচিত হয় না কখনো;
রবিফসলের দেশে রৌদ্রের ভিতরে
মনে হয় সুচেতনা, তোমারে হৃদয়ে
ভুল এসে স্ত্যকে অনুভব করে।

সময়ের নিরুৎসুক জিনিসের মতো-
আমার নিকট থেকে আজো বিংশ শতাব্দীতে তোমাকে ছাড়ায়ে
ডান পথ খুলে দিলো ব’লে মনে হ’লো,
যখন প্রচুরভাবে চ’লে গেছি বাঁয়ে।

এ-রকম কেন হ’য়ে গেল তবে সব
বুদ্ধের মৃত্যুর পরে কল্কি এসে দাঁড়াবার আগে।
একবার নির্দেশের ভুল হ’য়ে গেলে
আবার বিশুদ্ধ হ’তে কতোদিন লাগে?

সমস্ত সকালবেলা এই কথা ভেবে পথ চ’লে
যখন পথের রেখা নগরীতে- দুপুরের শেষে
আমাকে উঠায়ে দিয়ে মৈথুনকালের সব সাপেদের মতো
মিশে গেল পরস্পরের কায়ক্লেশে,

তাকাতেই উঁচুনিচু দেয়ালের অন্তরঙ্গ দেশ দেখা গেল;
কারু তরে সর্বদাই ভীত হ’য়ে আছে এক তিল;-
এ-রকম মনে হ’লো বিদ্যুতের মতন সহসা;
সাগর- সাগর সে কি- অথবা কপিল?

এ-রকম অনুভব আমাকে ধারণ ক’রে ছুপে
স্থির ক’রে রেখে গেল পথের কিনারে;
আকাশ নিজের স্থানে নেই মনে হ’লো;
আকাশকুসুম তবু ফুটেছে পাপড়ি অনুসারে।

তবুও পৃথিবী নিজে অভিভুট ব’লে
ইহাদেরো নেই কোনো ত্রাণ;
সকলি মহৎ হ’তে চেয়ে শুধু সুবিধা হতেছে;
সকলি সুবিধা হ’তে গিয়ে তবু প্রধূমায়মান।

বির্তক আমার মতো মানুষের তরে নয় তবু;
আবেগ কি ক্রমেই আরেক তিল বিশোধিত হয়?
নিপ্পন ভীষণ লিপি লিখে দিলো সূর্যদেবীকে;
সৌরকরময় চীন, রুশের হৃদয়।

জীবনানন্দ দাশ
লিখেছেন

জীবনানন্দ দাশ

জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। তার কবিতায় পরাবাস্তবের দেখা মেলে। জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী।

জীবনানন্দ দাশের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:

* ঝরাপালক (১৯২৭)
* ধূসর পান্ডুলিপি (১৯৩৬)
* বনলতা সেন (১৯৪২)
* গীতি কবিতার গল্প (১৯৪৮)
* রূপসী বাংলা (১৯৫২)

জীবনানন্দ দাশের কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রেম, বিরহ, জীবনের অনিশ্চয়তা, মৃত্যু, একাকীত্ব, উদ্বেগ, আশা, নিরাশা, স্বপ্ন, বাস্তবতা, ইত্যাদি নানামুখী বিষয়ের চিত্রায়ণ দেখা যায়। তার কবিতায় রয়েছে স্বতন্ত্র কবিতার ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বাংলা কাব্যে আধুনিকতার নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটে।

জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্পের মধ্যে রয়েছে:

* কালবেলায় (১৯৫১)
* জীবিত ও মৃত (১৯৫২)

জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্পে প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রেম, বিরহ, জীবনের অনিশ্চয়তা, মৃত্যু, একাকীত্ব, উদ্বেগ, আশা, নিরাশা, স্বপ্ন, বাস্তবতা, ইত্যাদি নানামুখী বিষয়ের চিত্রায়ণ দেখা যায়। তার ছোটগল্পে রয়েছে স্বতন্ত্র গল্পের ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি। জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্প বাংলা সাহিত্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধের মধ্যে রয়েছে:

* কবিতার কথা (১৯৪২)
* সাহিত্য কথা (১৯৫২)

জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধে সাহিত্যের স্বরূপ, কবিতার বিষয়বস্তু, ভাষা, ছন্দ, অলংকার, ইত্যাদি বিষয়ে তার নিজস্ব চিন্তাভাবনার প্রকাশ ঘটেছে। তার প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা করেছে।

জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে এক অমূল্য সম্পদ। তার সাহিত্যকর্ম বাঙালির আবেগ, অনুভূতি, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতিফলন। তার সাহিত্যকর্ম পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যকর্মের গুরুত্ব নিয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন যে, তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, তিনি বাংলা কাব্যে নৈরাজ্যের স্রষ্টা। তবে, এ কথা অনস্বীকার্য যে, জীবনানন্দ দাশ বাংলা কাব্যে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছেন।

মন্তব্য করুন